অমাবস্যা-পূর্ণিমায় জোয়ারে ভাঙন আরও ভয়াবহ হবে

সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে নদ-নদীতে অধিক উচ্চতার জোয়ারে ছয়টি উপজেলার ১২টি স্থানে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ১২২৫ মিটার বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন দেখা দেওয়া এসব স্থানে জরুরি ভিত্তিতে রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। না হলে সামনের অমাবস্যা-পূর্ণিমায় জোয়ারের তোড়ে ভাঙন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ৪ আগস্ট থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৭ আগস্ট পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। জোয়ারের তোড়ে বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রামে পানি ঢুকে বসতবাড়ি, কৃষিজমি প্লাবিত হয়। প্লাবিত হয় বরিশাল নগরেরও বিভিন্ন এলাকা।

পাউবো সূত্র জানায়, মূলত ৫ আগস্ট নদ-নদীতে অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ার হয়। ওই দিন বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে বিপৎসীমার প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ার প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া মেঘনা, তেঁতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ, নয়াভাঙ্গুনী, বিষখালী, পায়রা, বলেশ্বর, আগুনমুখা নদ–নদীতেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে জোয়ার প্রবাহিত হয়। সবচেয়ে বেশি পানি বৃদ্ধি পায় ভোলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার শাখা তেঁতুলিয়া নদীতে। তেঁতুলিয়া নদীতে ওই দিন নদীর পানির উচ্চতা ছিল বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপরে। এ ছাড়া পটুয়াখালীর আগুনমুখা, বরগুনা ও পটুয়াখালীর দুই জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা পায়রা এবং বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা বিষখালী নদীতে জোয়ারের উচ্চতা ছিল বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বরিশাল আঞ্চলিক প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্র জানায়, চার দিন ধরে অব্যাহত অধিক উচ্চতার জোয়ারে বরিশাল জেলার ছয় উপজেলার ১২টি স্থানে বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ওই সব এলাকা ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছে। বর্তমানে জোয়ারের উচ্চতা কমে যাওয়ায় গ্রামে পানি প্রবেশ না করলেও সামনে ভাদ্রের অমাবস্যা-পূর্ণিমায় পুনরায় নদ-নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। এতে ভাঙন আরও ত্বরান্বিত হবে।

জোয়ারের তোড়ে বিলীন হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে বরিশাল সদর উপজেলায় কীর্তনখোলা নদীর চরকাউয়া এলাকায় ১৫০ মিটার, চরমোনাই দরবারসংলগ্ন ৭০ মিটার, সাহেবের হাট কড়ইতলা নদীর রাজারহাট এলাকায় ২১৫ মিটার, চড়বাড়িয়া, লামছড়ি এলাকায় ১২০ মিটার, হিজলা উপজেলার বদরটুনি স্কুল এলাকায় ৫০ মিটার, একই উপজেলার দক্ষিণ বাউশিয়া নামক এলাকায় ১০০ মিটার, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চরবগি স্কুল এলাকায় ১০০ মিটার, বাবুগঞ্জ উপজেলার ছোট মিরগঞ্জ বাজারসংলগ্ন এলাকায় ১০০ মিটার, চাঁদপাশা সিকদার বাড়ি এলাকায় ৫০ মিটার, মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর লঞ্চঘাট ও পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন এলাকায় ৭০ মিটার ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর দুর্গাপুর এলাকায় ২০০ মিটার।


পাউবো বলছে, বর্তমানে যেসব স্থান ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে, সেসব এলাকায় ভাঙনরোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও নদীশাসনের বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প প্রস্তাব পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেসব প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু এর আগে ওই সব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সাময়িক ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য পাউবোর পক্ষ থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল আঞ্চলিক প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ভাঙন আপাতত রোধকল্পে আমরা তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশে আমরা ইতিমধ্যে হিজলার বদরটুনি স্কুল, দক্ষিণ বাউশিয়া, মেহেন্দীগঞ্জের চরবগি স্কুল ও বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা সিকদার বাড়ি নামক স্থানে জিও ব্যাগ ফেলে জরুরি আপৎকালীন প্রতিরোধমূলক কাজ শুরু করেছি। বরাদ্দ পাওয়ার পর দ্রুত সবগুলো স্থানেই একযোগে কাজ শুরু হবে।’