'যা জানি, বলেছি'

তলবের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকাল ১০টার দিকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন সদ্য পদত্যাগ করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। ঢাকা, ১২ আগস্ট। ছবি: হাসান রাজা
তলবের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকাল ১০টার দিকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন সদ্য পদত্যাগ করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। ঢাকা, ১২ আগস্ট। ছবি: হাসান রাজা

তলবে হাজির হয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় থেকে বের হয়েছেন সদ্য পদত্যাগ করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি সৎ, দক্ষ ও সফল কর্মকর্তা হিসেবে সারা জীবন কাজ করেছেন। দুদকের তদন্তের বিষয়ে যা জানেন, তা বিস্তারিত বলেছেন।

আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন আজাদ। বেলা তিনটার দিকে সেখান থেকে বের হন তিনি। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের ফটকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আজাদ।

আজাদ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) ক্রয়সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ দুদক তদন্ত করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি হিসেবে আমি এ সম্পর্কে কী জানি, তা শোনার জন্য দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে আসতে অনুরোধ করেন। আমি যা জানি, তা বিস্তারিত বলেছি। তদন্তাধীন বিষয়টি সম্পর্কে এই মুহূর্তে এর বেশি বলা সম্ভব না।’

আজাদ বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমি ২০১৬ সাল থেকে ডিজির দায়িত্ব পালন করে আসছিলাম। আমি লক্ষ করছিলাম, আমাকে নিয়ে অপপ্রচারের অপচেষ্টা শুরু হয়েছে, যা আমার কাছে সম্মানের বিষয় নয়। তাই বিবেকতাড়িত হয়ে গত ২১ জুলাই আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করি।’

আজাদ বলেন, ‘আমি এটা বলে শেষ করতে চাই, আমি একজন কঠোর, পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান, সৎ, দক্ষ, সফল ও মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে সারা জীবন কাজ করেছি। আমি অহংকার, অহমিকামুক্ত। সরল ও সজ্জন ব্যক্তি।’

আজাদ বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যব্যবস্থার সব ক্ষেত্রে আমার পর্যাপ্ত জ্ঞান, অভিজ্ঞা ও কর্মদক্ষতা আছে। কোভিডের মতো মহাদুর্যোগে লাখ লাখ মানুষের যাতে প্রাণহানি না ঘটে, সে জন্য আমি আমার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও বিবেকবোধ থেকে নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে কাজ করেছি। এরপরও কোভিড থেকে নিজেকেও বাঁচাতে পারিনি।’

আজাদ বলেন, অপরাধ যে-ই করুক, তার বিচার হওয়া উচিত।

আজাদ ছাড়াও আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. আমিনুল হাসানসহ চার কর্মকর্তা দুদকে হাজির হন। অন্যরা হলেন উপপরিচালক মো. ইউনুস আলী, মো. শফিউর রহমান ও গবেষণা কর্মকর্তা মো. দিদারুল ইসলাম।

দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী ও শেখ মো. ফানাফিল্যা পৃথক দুটি দাপ্তরিক চিঠিতে আবুল কালাম আজাদকে তলব করেন। তলবের চিঠিতে ১২ ও ১৩ আগস্ট তাঁকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।

অন্য একটি চিঠিতে তলব করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. আমিনুল হাসানসহ চার কর্মকর্তাকে। তাঁদের আজ (১২ আগস্ট) দুদকের হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়।

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মীর মো. জয়নুল আবেদীন চিঠিতে বলেছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় নিম্নমানের মাস্ক, পিপিইসহ আনুষঙ্গিক স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এসেছে। আবুল কালাম আজাদকে পাঠানো ‘অতীব জরুরি’ তলবি নোটিশে ১২ আগস্ট দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হলে বর্ণিত অভিযোগসংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য নেই মর্মে গণ্য করা হবে।

দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা তাঁর নোটিশে আবুল কালাম আজাদকে ১৩ আগস্ট তলব করেছেন। নোটিশে তিনি বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ও অন্যদের বিরুদ্ধে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে করোনার সনদ দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। সাহেদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাঁর (আবুল কালাম আজাদ) বক্তব্য গ্রহণ প্রয়োজন। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. আমিনুল হাসানসহ চারজনকে ১২ আগস্ট দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়।