ভাঙ্গা থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি আ.লীগের

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সংবাদ সম্মেলন। গতকাল বিকেলে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে। ছবি: প্রথম আলো
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সংবাদ সম্মেলন। গতকাল বিকেলে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে। ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুর রহমান বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এমদাদুল হকের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সফিকুর রহমান ভাঙ্গা থানায় যোগদানের পর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা অজুহাতে থানায় এনে শারীরিক অত্যাচার, নির্যাতন করে টাকা দাবি করেন। অন্যথায় মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান। যাঁরা টাকা দিতে পারেন, তাঁদের থানা থেকে ১৫১ বা ৩৪ ধারায় চালান করা হয়, আর যাঁরা টাকা দিতে পারেন না, তাঁদের মাদক বা অন্য মামলার আসামি হিসেবে জেল খাটতে হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৫ জুন ওসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন এমদাদুল হক। ওসি বারবার চাপ দেওয়ার পরও তিনি ওই অভিযোগ প্রত্যাহার করেননি। এর জের ধরে ওসির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর (এমদাদুল) ছেলে মো. রীজু মিয়াকে (৩৫) নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়। লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, তিনি যেন ভাঙ্গা থানার ওসির অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে নিরীহ জনগণকে রক্ষা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল ঘোষ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক ঝর্ণা হাসান, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভী মাসুদ প্রমুখ।

বিপুল ঘোষ ও সৈয়দ মাসুদ জানান, অভিযোগটি ভাঙ্গার ওসিকে নিয়ে। ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের এ অভিযোগের সঙ্গে তাঁরা (জেলা আওয়ামী লীগ) একমত পোষণ করেন বলেই সশরীর এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলন উপলক্ষে যে ব্যানার লেখা হয়, তাতে লেখা ছিল, ‘মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মাদক ব্যবসায়ী রাজ্জাক ফকির, ইসমাইল ফকির, সিদ্দিক মাতুব্বর, ডাকাত আমির আলী গং কর্তৃক সন্ত্রসী হামলায় মো. রীজু মিয়া গুরুতর আহত হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন’।

কিন্তু এক পৃষ্ঠায় কম্পোজ করা ৪১ লাইনের ওই লিখিত বক্তব্যের মাঝামাঝিতে মাত্র ছয়টি লাইনে রীজুর ওপর হামলার বিষয়টি আনা হয়েছে। হামলার ঘটনায় ব্যানারে যাঁদের নাম লেখা হয়েছে, লিখিত বক্তব্যে তাঁদের কারও নাম উল্লেখ না করে বলা হয়েছে, ‘ওসির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এমদাদুলের ছেলেকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি সফিকুর রহমান বলেন, অনেক নেতা আগে থানার দালালি করতেন, তিনি আসার পর তা বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এ–জাতীয় অভিযোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইজিপি বরাবর দেওয়া হয়েছে। সে অভিযোগ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশে ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দিয়ে তদন্ত করে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ওসি বলেন, স্থানীয় বিরোধকে কেন্দ্র করে মাদকসহ এক ব্যক্তিকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করায় রীজুর ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ হামলার বিষয়ে বুধবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ না দেওয়া হলেও পুলিশ হামলার সঙ্গে জড়িত সাতজনকে আটক করেছে। তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়। তিনি আসার পর এ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মাদক–চুরি–ডাকাতি কমে গেছে। ফলে থানাতেও কমে গেল মামলার সংখ্যা।

পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ভাঙ্গা থানার ওসির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত বিভিন্ন অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যেসব অভিযোগ আমলযোগ্য, তা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ও পুলিশের হেডকোয়ার্টারের উদ্যোগে তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ওসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।