অনানুষ্ঠানিক খাতের স্বাস্থ্য সেবাদাতাদের নিয়ে জনমুখী পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান

‘কোভিড-১৯ অতিমারিতে অনানুষ্ঠানিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের ভূমিকা ও স্বাস্থ্যনীতিতে এর প্রভাব’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে হেলথ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ এবং জীয়ন। ছবি: সংগৃহীত
‘কোভিড-১৯ অতিমারিতে অনানুষ্ঠানিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের ভূমিকা ও স্বাস্থ্যনীতিতে এর প্রভাব’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে হেলথ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ এবং জীয়ন। ছবি: সংগৃহীত

দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতের স্বাস্থ্য সেবা দানকারীদের প্রয়োজনীয়তা এবং ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তাদের প্রশিক্ষিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এক ওয়েবিনারের আলোচকেরা বলেন, এই সেবাদাতাদের অস্বীকার না করে জনমুখী পরিকল্পনা করে তাদের কাজে লাগাতে হবে।

হেলথ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ এবং জীয়নের যৌথ উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ‘কোভিড-১৯ অতিমারিতে অনানুষ্ঠানিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের ভূমিকা ও স্বাস্থ্যনীতিতে এর প্রভাব’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।

ওয়েবিনারের জীয়নের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী রুবায়াত খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ৯৫ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবাদাতা অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন এবং দেশের ৭০ শতাংশ সেবা তারা দেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেও তারা ঝুঁকি নিয়েও কাজ করেছেন। তবে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সত্ত্বেও দেশের স্বাস্থ্যনীতিতে এর প্রতিফলন দেখা যায় না।

রুবায়াত খান বলেন, সাভার উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার উদ্যোগে দুই হাজারেরও বেশি গ্রাম ডাক্তারদের করোনা মোকাবিলায় কাজে লাগানো হয়েছে এবং ভালো ফল পাওয়া গেছে। বিশেষত মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া, মাস্ক বিতরণ করা, পরীক্ষা করতে এবং বাসায় আইসোলেশনে থাকতে উদ্বুদ্ধ করা এবং সঠিক সময়ে হাসপাতালে পাঠানোর মাধ্যমে তারা বিভিন্নভাবে সাভারে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং রোগ নিরাময়ে সহায়তা করেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, দেশে ডাক্তারের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি অপ্রশিক্ষিত পল্লি চিকিৎসক রয়েছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের এই চিকিৎসকদের নিয়ে আগামী ১৫-২০ বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরির আহ্বান জানান তিনি।

তবে পরিকল্পনা কমিশনের জয়েন্ট চিফ (হেলথ উইং) ড. আ.এ. মো. মহিউদ্দিন ওসমানী বলেন, সারা দেশে প্রশিক্ষিত ডাক্তারদের ছড়িয়ে দিয়ে তাদের জনমুখী এবং সেবাপরায়ণ করানো সম্ভব হলে থাইল্যান্ড এর মতো বাংলাদেশেও গ্রাম ডাক্তারদের প্রয়োজন এবং জনপ্রিয়তা কমে আসবে।

পল্লি চিকিৎসকদের নিয়ে সার্বিক নিরীক্ষা হওয়া এবং গবেষণার ভিত্তিতে তাদের কীভাবে জনস্বাস্থ্য খাতে কাজে লাগানো যায়, তার জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করার কথা বলেন ব্র্যাক স্কুল অব পাবলিক হেলথের ভারপ্রাপ্ত ডিন মালবিকা সরকার ।

ভারতীয় স্বাস্থ্য- অর্থনীতিবিদ জিষ্ণু দাস বলেন, ছোট ছোট প্রায়োগিক এবং কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রাম ডাক্তারদের ধীরে ধীরে জনস্বাস্থ্যের মূল ধারায় নিয়ে আসা যেতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আফতাবউদ্দিন বলেন, গ্রাম ডাক্তারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সেবার মান উন্নয়ন এবং তাদের চিকিৎসা থেকে ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব।

ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ হেলথ অ্যালায়েন্সের অ্যাক্টিং কনভেনর মাহরুখ মহিউদ্দিন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রজ্ঞা এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবা খাত সম্পর্কে একটি জনমুখী পরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করা হবে।