'বিদ্রোহী'তে বিভক্ত আ.লীগ-বিএনপি

ময়মনসিংহে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—উভয় দলেই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এতে ভোটার ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলা ফুলবাড়িয়া, গৌরীপুর, ধোবাউড়া, ফুলপুর ও মুক্তাগাছায় কাল শনিবার (১৫ মার্চ) ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে।
ফুলবাড়িয়া: উপজেলায় তৃণমূলের ভোটে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী হন আবদুল মালেক সরকার। দলটির আরও দুজন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম সাইফুজ্জামান। আবদুল মালেক সরকার বলেন, ‘আমি তৃণমূলের ভোটে বিজয়ী প্রার্থী। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের একটা অংশ আমার বিরুদ্ধে কাজ করছে। এটা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন হলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
এদিকে আজিজুর রহমান বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী হলেও দলের সিদ্ধান্ত না মেনে তিনজন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আবদুল আজিজ ও পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কবীর হোসেন।
গৌরীপুর: এ উপজেলায় তৃণমূলের ভোটে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী হন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ খান পাঠান। কিন্তু ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে লড়ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক শরীফ হাসান। এখানে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আহাম্মদ তায়েবুর রহমান। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটযুদ্ধে রয়েছেন পৌর বিএনপির সভাপতি মকবুল হোসেন। তাঁকে ইতিমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু দলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন বহিষ্কার করলেও তিনি বিএনপির ভোট পাবেন।
ধোবাউড়া: এখানে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান আকন্দ। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরও দুজন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান ও সদস্য মজনু মৃধা। মজিবুরকে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু মজিবুরের সমর্থকদের দাবি, দলের অনেক তৃণমূল কর্মী তাঁর পক্ষে কাজ করছেন। তাই তিনিই বিজয়ী হবেন। এখানে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মফিজ উদ্দিন। তবে দলটির আরও দুজন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল হক ও সহসভাপতি শামছুর রশিদ।
ফুলপুর: উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক দল-সমর্থিত প্রার্থী হলেও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আতাউল করিম ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে নির্বাচন করছেন। এখানে সাবেক সাংসদ আবুল বাশার আকন্দ বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী। কিন্তু দলটি থেকে ‘বিদ্রোহী’ হয়েছেন আকিনুর রহমান।
মুক্তাগাছা: এখানে আওয়ামী লীগের সমর্থন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সরকার। তবে আওয়ামী লীগের সমর্থন দাবি না করে নির্বাচন করছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ইহছাক আলী। এখানে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে আছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হারুন।
ওই পাঁচ উপজেলার বেশ কয়েকজন ভোটার ও দলীয় নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের পক্ষে দলের অনেক নেতা-কর্মী গোপনে ও প্রকাশ্যে কাজ করছেন। এতে উভয় দলের প্রার্থীই বিপাকে পড়েছেন।
জেলা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি ও সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন জানান, দলের সিদ্ধান্ত না মানায় ইতিমধ্যে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন সরকার বলেন, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যাঁরা নির্বাচন করছেন তাঁদের পক্ষে নেতা-কর্মীদের কাজ না করতে বলা হয়েছে।