এক ইটভাটাতেই সব আইন লঙ্ঘন

নতুন ইটভাটা স্থাপন করতে হলে আইন অনুযায়ী দুই একর জায়গার বেশি ব্যবহার করা যাবে না। জমির প্রকৃতি কৃষি হওয়াও চলবে না। আবাসিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে হতে হবে ইটভাটার অবস্থান। এসব লঙ্ঘন করেই গড়ে উঠছে সিলেটের সবচেয়ে বড় অটো-ইটভাটা।
ইটভাটার নাম সাকের অটো ব্রিক। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ঘাটের চটি এলাকায় সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠছে ইটভাটাটি। ভাটার মালিক সিলেটের কুমারগাঁও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের উদ্যোক্তা আতাউল্লাহ সাকের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘাটের চটি এলাকায় সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক থেকে প্রায় ৫০০ ফুট দূরে সাকেরস গার্ডেন এলাকা। সেখানে চার একরের বেশি জমির ওপর ভাটার নির্মাণ চলছে। ভাটার পুরোটাই কৃষিজমি। সেখানে মাটির স্তূপ রাখা হয়েছে। ভাটার একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ, অন্য দুই দিকে বসতবাড়ি। পশ্চিম দিকে একটি আবাসন কোম্পানির প্লট। সেখানে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ চলছে। প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে জালালাবাদ সেনানিবাসের অবস্থান।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ইটভাটার ক্ষেত্রে দুটো আইন প্রচলিত রয়েছে। ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন, ২০০১-এর ৪ নম্বর ধারার ৫ নম্বর উপধারায় উল্লেখ রয়েছে, আবাসিক এলাকা থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার দূরত্বে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। জমির প্রকৃতি হবে অকৃষি। ইটভাটার নির্দিষ্ট জায়গা কোনোভাবে দুই একরের বেশি হবে না। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলে ওই এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না।
সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, সাকের অটো ব্রিক ইটভাটার ২০০ মিটার এলাকায় বসতবাড়ি রয়েছে। দুই একর জায়গার আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যেও চার একরের বেশি জায়গা (৪৬২ শতক) ব্যবহার করা হচ্ছে। জায়গার ভূমির প্রকৃতি ‘সাইলউরা’ (ধানিজমি)। ১৫০ মিটারের মধ্যে রয়েছে চিকনাগুল মাদ্রাসা। এ ছাড়া ইটভাটার পাশে খোলা মাঠে জালালাবাদ সেনানিবাসের শীতকালীন মহড়া হওয়ায় সেটিকেও শিক্ষাক্ষেত্র হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্পষ্টতই সব আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।
সাকের অটো ব্রিকের মহাব্যবস্থাপক জিকলুর রহমান মুঠোফোনে দাবি করেন, ‘আমাদের জানামতে আইন লঙ্ঘন হচ্ছে না। আপনি আমাদের অফিসে এসে দেখান, এ বিষয়ে সরাসরি আলাপ-আলোচনা করি।’
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম দফায় আমরা পর্যবেক্ষণ করে আইন লঙ্ঘন হওয়ার বিষয়ে জেনেছি। দ্বিতীয় দফায় পর্যবেক্ষণের পর এ অবস্থা দেখলে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’