নাকে খত দিচ্ছেন তো...আর কী কতা?

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেছেন, ‘আইচ্ছা মানলাম যে কমিশন জিরো। কিন্তু এই জিরোর অধীনে তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করতেছেন তো, নাকে খত দিচ্ছেন তো। আর কী কতা?’

আজ রোববার দুপুরে নির্বাচন কমিশনের মিডিয়া সেনটারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন অথর্ব, মেরুদণ্ডহীন, কমিশনারদের পদত্যাগ করা উচিত।’ এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে আপনারা পদত্যাগ করবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল মোবারক মন্তব্য করেন, জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্দলীয় উপজেলা নির্বাচনে এসে বিএনপি নাকে খত দিয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে কমিশনের আরেক জ্যেষ্ঠ কমিশনার জাবেদ আলী বলেন, বিএনপি এ ধরনের কথা নতুন বলছে না। রাষ্ট্রপতি যেদিন থেকে কমিশনারদের নিয়োগ দিয়েছেন, সেই দিন থেকেই এ ধরনের কথা বলে আসছে।

কাল সোমবার উপজেলা নির্বাচনের পঞ্চম পর্যায়ে ৩৪টি জেলার ৭৩টি উপজেলায় (গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলাসহ) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনের বিভিন্ন তথ্য জানানোর জন্যই আজ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ, জাবেদ আলী, মো. শাহনেওয়াজ এবং ভারপ্রাপ্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তাঁরা।
কালকের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের জবাবে কমিশনার আবদুল মোবারক দৃঢ় কণ্ঠেই বলেন, ‘আশা করছি, সুষ্ঠু হবে।’ এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১ শতাংশেরও কম সহিংসতা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ উল্লেখ করেন, এ পর্যন্ত নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা ৫ শতাংশের কম।

নির্বাচনে পুলিশ বাহিনী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মানছে না—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আবদুল মোবারক বলেন, ‘যারা দায়িত্ব পালন করছে তারা সবাই মানুষ। সবাই আইন মানবে বা গাফিলতি করবে না, তা বলা যায় না। তবে কেউ আইন অমান্য করলে ছাড় পাবে না।’

নির্দলীয় উপজেলা নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দল তাদের সমর্থিত বিভিন্ন পদের প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছে উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজনীতিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আপনাদের সমর্থকদের সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলেন।’ একইভাবে যারা নির্বাচনের সহিংসতায় জড়াচ্ছে তাদের উদ্দেশে আবদুল মোবারক বলেন, ‘আপনাদের মৃত্যুতে আপনাদের পরিবারেরই ক্ষতি হবে। সারা বছর আপনাদের জন্য কেউ শোক সভা করবে না। এতে কোনো ফায়দা নাই।’

নির্বাচনে সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত কাউকেই কমিশন ছাড় দেয় না বা দেবে না বলে উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তরা ভাবে, ভোটের তারিখ অতিক্রান্ত হয়ে গেলেই দুষ্কর্ম হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। তবে তাদের মনে রাখতে হবে, তারা কেউ রেহাই পাবে না। দুষ্কর্মের রেকর্ড থাকবে নিভৃতে। কোনোভাবেই যাতে কেউ নিষ্কৃতি না পায়, তার সব ব্যবস্থাই করা আছে। আজ না হয়, কাল না হয় পরশু ব্যবস্থা নেওয়া হবেই।

তবে কমিশনের পক্ষ থেকে বারবার একই ধরনের কথা বলা হলেও তার নজির দেখা যাচ্ছে না—এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করলে কমিশনাররা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আবদুল মোবারক বলেন, আইনে এ কথাগুলোই বলা আছে। তা বলার রেওয়াজ আছে। মনে করিয়ে দিতে হয়, তাই একই কথা বারবার বলা হচ্ছে।

গণমাধ্যমকর্মীদের কারও কারও নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে কমিশনাররা বলেন, ‘আপনি বলতেছেন বলেন, সবাই কী বলল তা নিয়ে প্রশ্ন করবেন না।’ উল্টো তাঁরা গণমাধ্যমকর্মীর কাছেই প্রশ্ন করেন, ‘নির্বাচন কমিশন এর বাইরে আর কী করতে পারত বলে আপনি মনে করেন?’ সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা শিখে এসে প্রশ্ন করতেও বলেন কমিশনারদের কেউ কেউ। গণমাধ্যমকর্মীরা এ ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। একপর্যায়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাব না দিয়েই ‘আজ যথেষ্ট হয়েছে, আর না’ বলে কমিশনাররা চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যান।