চান্দিনার অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অধিকাংশ কেন্দ্র দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর মুরাদনগর উপজেলার চিত্র ছিল প্রায় ভোটারশূন্য। চান্দিনার ৭২টি কেন্দ্রের ৫৩টিই দখলের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপি ও এলডিপির দুই প্রার্থী। এদিকে চান্দিনার দুটি ভোটকেন্দ্রে গুলিবর্ষণসহ কয়েকটি কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনায় পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।
নির্বাচনে অনিয়মের প্রতিবাদে বিএনপি আজ মঙ্গলবার চান্দিনা উপজেলায় আধা বেলা হরতালের ডাক দিয়েছে।
চান্দিনায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মো. মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া দোয়াত-কলম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সমর্থিত মো. আবু তাহের টেলিফোন প্রতীক এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত তপন বকশী লড়েছেন আনারস প্রতীক নিয়ে।
বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী ও চান্দিনা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘উপজেলার ৭২টি কেন্দ্রে সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৫৩টি কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ ও এলডিপি-সমর্থিত নেতা-কর্মীরা। কয়েকটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান। এ অবস্থায় নির্বাচনী পরিবেশ না থাকায় আমি নির্বাচন বর্জন করলাম। একই সঙ্গে পুনর্নির্বাচনের দাবি করছি।’ এলডিপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. আবু তাহেরও একই সময় নির্বাচন বর্জন করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী গোলাম দস্তগীর বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছিল। বিএনপি ও এলডিপি-সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হতে পারবে না এটা বুঝতে পেরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।’
উভয় উপজেলার কমপক্ষে ২৫টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে চান্দিনায় বেশি আর মুরাদনগরে কম ভোটার চোখে পড়ে। দুপুর ১২টায় চান্দিনার জোয়াগ ইউনিয়নের ধেরেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোরপুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি, এলডিপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক কয়েকটি গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হন জোয়াগ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের মা চন্দ্রবান বিবি (৮০), ধেরেরা গ্রামের সবুজুল হকের ছেলে ছাত্রদলের কর্মী সুমন মিয়া (২২), অজ্ঞাতনামা একজন এবং জোরপুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে স্থানীয় যুবদলের কর্মী নজরুল ইসলাম ও ছাত্রদলের কর্মী শাহজালাল। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে আরও ১৫ জন আহত হন।
চান্দিনা থানার ওসি গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘কয়েকটি কেন্দ্রে বিছিন্ন ঘটনা ঘটেছে।’
মুরাদনগর উপজেলায় কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩০। দামগড়, বড়ইবাড়ি ও রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবীপুর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাকান্দা আলিয়া মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে ভোটারের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। বিকেল সাড়ে চারটায় দারোরা দীনেশচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনার সময় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম ও কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া সরকারের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে আনিসুর রহমান (১২) নামের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। তার বাবার নাম বাবুল মিয়া। আহত অবস্থায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কড়ইবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বেলা একটায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম ও কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া সরকারের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ ১৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে।