সন্দ্বীপে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল!

বেলা একটা। মুছাপুর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। কোনো ভোটার নেই। কেন্দ্রের ৬ ও ৭ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা গেল সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা সিল মারা কিছু ব্যালট পেপার সামনে নিয়ে বসে আছেন। একই অবস্থা ৩ ও ২ নম্বর বুথেও। চেয়ারম্যান পদের ব্যালট পেপারের সব সিল মারা হয়েছে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী এম শাহজাহানের প্রতীক আনারসে। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের ব্যালট পেপারে সিল মারা হয়েছে কলস ও টিয়া পাখি প্রতীকে। এই দুই প্রতীকও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীদের।
সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, মোট পাঁচটি বুথে চেয়ারম্যান পদের ৩৭৫টি ব্যালট পেপারে প্রকাশ্যে সিল মারা হয়েছে।
কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, কিছুক্ষণ আগে ওই ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপারে জোর করে প্রকাশ্যে সিল মারে একদল যুবক। র‌্যাবের একটি দল ভোটকেন্দ্রে আসার পর সবাই পালিয়ে যায়। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, কেন্দ্রে কিছু হয়নি। প্রকাশ্যে সিল মারা ব্যালট পেপারের তথ্য আছে জানালে তিনি বলেন, ২০টির মতো ব্যালটে সিল মারা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন—এ প্রশ্নের জবাবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাচ্ছি।’ তিনি জানান, ওই কেন্দ্রে ভোটার তিন হাজার ৫৫৬ জন।
এর আগে দুপুর ১২টায় মগধরা হাইস্কুল কেন্দ্রের একটি কক্ষে দেখা যায়, ভোটাররা লাইনে। কিন্তু সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোছাদ্দেকুল মাওলা নেই। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সেখানে উপস্থিত একজন ভোটার ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়ে গেছে। ভোট দিতে এসেও কাউকে পাচ্ছি না। একটু পরই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। ব্যালট পেপার কারা নিয়ে গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু বলতে পারব না।’
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ইকবাল হায়দার বলেন, ‘১৮-২০টি ব্যালট পেপারে প্রকাশ্যে সিল মারা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা চেয়েছি। তাঁরা এসেছেন। ব্যালট পেপারগুলো জব্দ করা হয়েছে।’
সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৭৯টি কেন্দ্রের মধ্যে এমন অনেকগুলো কেন্দ্রে প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিছু কেন্দ্রের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
মগধরা গোলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ও উপজেলা সদরের বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ ছিল শান্তিপূর্ণ। নির্বাচনের আগের রাত থেকে দ্বীপের প্রত্যন্ত এলাকায় সহিংসতার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহিংসতাপ্রবণ এলাকায় অভিযান চালায়। ফলে নির্বাচনের দিন বড় ধরনের কোনো সহিংসতা হয়নি।
সকালে আলিমিয়ার বাজারের একটি কেন্দ্রের বাইরে গুলির শব্দ শোনা যায়। মাইটভাঙা আবেদা ফয়েজ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান বলেন, বাইরে ককটেল বিস্ফোরণ হলেও ভোটকেন্দ্রে কোনো সমস্যা হয়নি।
বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী বেলায়েত হোসেন দাবি করে বলেন, ‘৩৭টি কেন্দ্রে জোর করে প্রকাশ্যে সিল মেরেছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। এসব কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখার জন্য সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন, ২০টি কেন্দ্রে তাঁর এজেন্টরা ঢুকতে পারেননি। জোর করে এসব কেন্দ্রে ভোট দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মো. শাহজাহান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভোটের আগের রাতে মাইটভাঙা, সারিকাইত ও আজিমপুর এলাকায় জলদস্যুরা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এ কারণে ভোটাররা আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন।
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটানির্ং কর্মকর্তা নূর ই খাজা আলামীন বলেন, নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে সমস্যা হবে, সেগুলোতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।