'আমাদের লোকেরা ভোট দিচ্ছে, আপনারা চলে যান'

সংবাদ সংগ্রহের জন্য গতকাল বেলা তিনটার দিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার এনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যান প্রথম আলোর এই দুই প্রতিবেদক। কেন্দ্রে ঢোকার মুখে সরকারদলীয় ক্যাডাররা তাঁদের বাধা দিয়ে বললেন, ‘কেন্দ্রে ঢোকা যাবে না’। এ সময় প্রথম আলোর টাঙ্গাইল প্রতিনিধিকে চিনতে পেরে সেখানে দৌড়ে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। তিনি সাবধান করে বললেন, ‘ভাই, ভেতরে আমাদের লোকেরা প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিচ্ছে। আপনাদের যাওয়া ঠিক হবে না। গেলে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। আপনারা চলে যান।’
এরপর ভেতরে না গিয়ে কেন্দ্রের পাশে এনায়েতপুর সেতুর ওপরে অবস্থান নিয়ে দেখা গেল, কেন্দ্রে কোনো ভোটার নেই। কেবল আওয়ামী লীগের ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষ ও অন্যান্য কক্ষে বসে ব্যালটে সিল মারছেন। টাঙ্গাইল সদরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হলেন খোরশেদ আলম।
সদরের আটটি কেন্দ্র ঘুরে জাল ভোট দিতে দেখা গেছে। এগুলো হলো পাতুলিপাড়া, ভাল্লুককান্দি, সাকরাইল, চরপৌলি, বড় বেলতা, বি এ ইউ মাদ্রাসা প্রভৃতি। এসব কেন্দ্রে ভোটার ছিল না বললেই চলে। তা ছাড়া আরও অন্তত ১৫টি কেন্দ্রে সরকারদলীয় কর্মীদের জাল ভোট দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কেন্দ্র দখল করে জাল ভোটের অভিযোগ এনে বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এম এ হামিদ বেলা তিনটা ৪০ মিনিটে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি সদরের ১১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪০টি কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগ করেছেন। একই অভিযোগ এনেছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আজগর আলীও। তবে আওয়ামী লীগের খোরশেদ আলম তাঁর পক্ষে কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জেলার অপর উপজেলা গোপালপুরেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সেখানকার নয়টি কেন্দ্র ঘুরে ছয়টিতে সরকারদলীয় কর্মী-সমর্থকদের জাল ভোট দিতে দেখা গেছে। কেন্দ্রগুলোতে দু-চারজন ছাড়া ভোটার দেখা যায়নি।
দুপুর ১২টার দিকে হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোজ্জাম্মেল হোসেনের কক্ষসহ তিনটি কক্ষে বসে সরকারদলীয় কর্মীরা সিল মারছেন। এর কিছুক্ষণ আগে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আবদুল কাদের কবিরের এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে যেতে চাইলে উপজেলা যুবলীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম তাতে বাধা দেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাঁকে নিবৃত্ত করতে গেলে সাইফুল তাঁকেও ধমক দেন। এরপর সাইফুল প্রথম আলোর দুই প্রতিবেদককে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। বাকিরা পাহারা দিয়ে দুই প্রতিবেদককে কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে আসেন।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই কেন্দ্রে দুপুরের মধ্যেই মোট দুই হাজার ৯৬৫ ভোটের মধ্যে দুই হাজার ৮০০ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইউনুস ইসলাম তালুকদার পেয়েছেন দুই হাজার ৭৯৫ ভোট আর বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আবদুল কাদের কবির পেয়েছেন মাত্র পাঁচ ভোট। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও গোপালপুর উপজেলার বাসিন্দা শামসুল আলম অভিযোগ করেন, গোপালপুরের ৩০টি কেন্দ্র দখল করেন সরকারদলীয় কর্মীরা।