রামগড়ে সেই সেনা সদস্য উদ্ধার, তিন যুবলীগ নেতা আটক

দুর্বৃত্তদের হাতে আটক সেনা সদস্যকে গত সোমবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা থেকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এ ঘটনায় জড়িত যুবলীগের তিন নেতাকেও আটক করা হয়েছে। মুক্তিপণের জন্য যুবলীগের নেতারা ওই সেনা সদস্যকে আটকে রাখেন বলে জানা গেছে।
উদ্ধার হওয়া সেনা সদস্যের নাম নান্টু আলী (৩০)। তিনি বগুড়া সেনানিবাসে কর্মরত। আটক ব্যক্তিরা হলেন রামগড় উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন, পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামিম মাহমুদ ও ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. শিপন।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে সেনা সদস্য নান্টু আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে ফারুক গংয়ের পরিচয় হয়। ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে তাঁদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। সেই সুযোগে নান্টু আলীকে বেড়ানোর আমন্ত্রণ জানান ফারুক। নান্টু আলী আমন্ত্রণ গ্রহণ করে গত রোববার সকালে রামগড় বেড়াতে এসে দুষ্ট চক্রটির হাতে ধরা পড়েন।
উদ্ধারের পর নান্টু আলী সোমবার রাতে সাংবাদিকদের জানান, রোববার ভোর ছয়টার দিকে তিনি রামগড়ে পৌঁছান। বাস থেকে নামার পর ফারুক ও ফরিদ নামের দুই ব্যক্তি তাঁকে নাশতা খাওয়ানোর কথা বলে কৌশলে রামগড় সিনেমা হলসংলগ্ন একটি গোপন আস্তানায় নিয়ে যান এবং সেখানে চোখ-মুখ বেঁধে তাঁর কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। চক্রটি রাতে তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এ সময় তাঁকে নানা হুমকি-ধমকি ও শারীরিকভাবে নাজেহাল করা হয়। তিনি বিষয়টি মুঠোফোনে তাঁর স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনদের জানান। তাঁরা বিষয়টি বগুড়া সেনানিবাসের এনসিসি অ্যাকাডেমির কর্মকর্তা মেজর মঞ্জুরকে জানান।
এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে নান্টু আলীকে ছাড়িয়ে নিতে রামগড়ে আসার কথা ফারুককে জানান তাঁর স্বজনেরা। র‌্যাবের একটি দলসহ নান্টু আলীর স্বজনেরা সোমবার বিকেলে সেখানে পৌঁছান। ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের টাকা হস্তান্তরের স্থানও নির্ধারণ করা হয়।
নান্টু আলীর ছোট ভাই সেন্টু জানান, রামগড় থানা পুলিশের সহযোগিতায় র‌্যাবের বিশেষ দল উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি টিলা জঙ্গল বেষ্টিত চক্রটির আস্তানায় অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নান্টু আলীকে উদ্ধার করে। এরপর উপজেলা সদরে অভিযান চালিয়ে চক্রটির প্রধান ফারুকসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
রামগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোস্তফা হোসেন দাবি করেছেন, আটক যুবলীগের নেতারা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। আর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো.আবদুল কাদের বলেন, যুবলীগের নেতাদের অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে।
রামগড় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহাঙ্গীর আলম সেনা সদস্যকে উদ্ধার ও তিনজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে তিনি জানান।