রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান বিজয়ী

রেজওয়ান আহাম্মদ
রেজওয়ান আহাম্মদ

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। গতকাল বুধবার এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
অসমর্থিত সূত্রের হিসাব অনুযায়ী, রেজওয়ান পেয়েছেন এক লাখ ৫৩ ভোট। তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ মহিতুল ইসলাম পেয়েছেন ৫৯ হাজার ৭০ ভোট। তবে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে রাত সোয়া ১২টা পর্যন্ত মোট ১১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৬টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ওই ফলাফল অনুযায়ী, রেজওয়ান পেয়েছেন ৯৮ হাজার ২৬ ভোট এবং মহিতুল পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৯৪৩ ভোট। মিঠামইনের বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৭১৫) ও বৈরাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের (ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৪৬০) ফলাফল ঘোষণা বাকি আছে।
এ বিষয়ে রাতে রিটার্নিং অফিসার মো. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই দুটি কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসাররা রওনা দেন। কিন্তু তাঁদের বহনকারী ইঞ্জিনচালিত নৌকা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাঁরা পৌঁছাতে পারেননি। তাঁদের উদ্ধারে প্রথমে যাওয়া নৌকায়ও সমস্যা দেখা দেয়। পরে আবার নৌকা পাঠানো হয়েছে। ফলাফল পৌঁছালেই ঘোষণা করা হবে।’
এ আসনের সাতবারের সাংসদ আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা রেজওয়ান রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মহিতুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তাঁর প্রতীক ফুটবল।
বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এই উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। ১৭টি কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো সিল মারার ও পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন মহিতুল। পরে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, এ নির্বাচন বহুল আলোচিত মাগুরা নির্বাচনের কারচুপির দৃষ্টান্তকে হার মানিয়েছে।
অবশ্য রেজওয়ান নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁর অন্যতম নির্বাচনী সমন্বয়ক ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান বলেন, তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ অসত্য। শক্তিশালীদের বিরুদ্ধে দুর্বলেরা সব সময়ই এ জাতীয় অভিযোগ এনে থাকে।
রিটার্নিং অফিসার দাবি করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।
অসমর্থিত সূত্র অনুযায়ী, উপনির্বাচনে মোট দুই লাখ ৭৯ হাজার ৭১৯ জন ভোটারের মধ্যে এক লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৮ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। অষ্টগ্রামে রেজওয়ান ২৮ হাজার ৪৭৬ ও মহিতুল ২৬ হাজার ১৭৩ ভোট, ইটনায় রেজওয়ান ৩৭ হাজার ৫৪ ও মহিতুল ২৩ হাজার ৬৭৩ এবং মিঠামইনে রেজওয়ান ৩৪ হাজার ৫২১ ও মহিতুল আট হাজার ৮৭৫ ভোট পেয়েছেন। সৈয়দ মহিতুলের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান দুপুরে প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ইটনার আটটি, মিঠামইনের চারটি ও অষ্টগ্রামের চারটি কেন্দ্র থেকে তাঁদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট কারচুপি করা হচ্ছে। এ অভিযোগ যাচাই করতে বেলা তিনটার পর ইটনার ওই আট কেন্দ্রের একটি চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ফুটবল প্রতীকের এজেন্টদের কেন্দ্রে দেখা যায়নি। ওই কেন্দ্রে ফুটবলের এজেন্ট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আবদুস সালাম, কামরুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ ও আবুল হাশেমের সঙ্গে কথা হয় কেন্দ্রের বাইরে। তাঁরা অভিযোগ করেন, পার্শ্ববর্তী করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফারুকের নেতৃত্বে নৌকার কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের বের করে দিয়েছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে মোস্তফা ফারুক বলেন, ‘আমি সকাল থেকেই ওই কেন্দ্রে ছিলাম। তবে আত্মীয়স্বজনের কাছে ভোট চাওয়ার বাইরে কিছু করিনি।’
ভোট গ্রহণ উপলক্ষে এ হাওর এলাকায় কড়া নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বেলা পৌনে ১১টার দিকে ইটনার বড়িবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট নৌকায় করে ভোটাররা কেন্দ্রে আসছেন। ওই কেন্দ্রের মোট ভোটার এক হাজার ৫১৩। ওই সময় পর্যন্ত এক-তৃতীয়াংশ ভোট পড়েছে বলে জানান কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এ নির্বাচনী এলাকার বেশির ভাগ ভোটাররাই নৌকায় করে কেন্দ্রে যাতায়াত করেন। মিঠামইনের ঘাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল থেকে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। ওই কেন্দ্রের মোট ভোট দুই হাজার ৮২৯। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বদরুজ্জামান তালুকদার জানান, দুপুর ১২টার মধ্যে ভোট পড়েছে ৩৫০টি। এদিকে একই সময়ের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে ইটনার মহেশচন্দ্র শিক্ষা নিকেতন কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রের মোট তিন হাজার ২২৯ ভোটের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পড়ে এক হাজার ৩৫০টি।