বেলকুচিতে আ.লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে জামায়াত নেতা নিহত

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুলিরচর গ্রামে গত বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত-সমর্থকদের সংঘর্ষে জামায়াতের এক নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১০ জন, ভাঙচুর করা হয়েছে কয়েকটি বাড়ি।
এদিকে, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় মিলন রহমান নামে শিবিরের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তবে মিলনের দাবি, আটকের পর পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে গুলি করে।
বেলকুচি: পুলিশ, দলীয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের ধুলিরচর ও পাশের কল্যাণপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে জামায়াতের কর্মী-সমর্থকদের রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছে। এর জেরে গত বুধবার রাত নয়টার দিকে ধুলিরচর গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুল মজিদের বাড়িতে জামায়াত-সমর্থকেরা হামলা চালান। তাঁরা কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করে চলে যান। ঘটনার পর রাত ১০টার দিকে মজিদ তাঁর লোকজন নিয়ে স্থানীয় জামায়াত নেতা আসলাম উদ্দীন ও তাঁর জামায়াত-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায়। দুই পক্ষে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত, কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। আহত আলমগীর হোসেনকে (২৫) হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। গুরুতর আহতদের মধ্যে আবদুল মজিদ (৫২), বেলাল হোসেন (৩৭) গোলাম মোহামঞ্চদ (২৮), শফিকুল ইসলাম (৪৩), মন্নাফ শেখ (২৩), লিটন শেখকে (২৫) সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত আলমগীর হোসেন ধুলিরচর গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন জামায়াতের বায়তুল মাল সম্পাদক ছিলেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে পুলিশ রাতেই বওড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী রুবেল রানা ও ধুলিরচর গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী আমিন উদ্দিনকে আটক করে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম ইউসুফ খান জানান, এলাকাটি জামায়াত ও শিবির-অধ্যুষিত। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী সেখানে ভোট পাওয়ায় জামায়াতের লোকজন ক্ষুব্ধ। এর জের ধরে জামায়াত-শিবিরের লোকজন হামলা চালায়।
তবে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মো. জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এতে তাঁদের এক নেতা নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আগামী রোববার বেলকুচি উপজেলায় অর্ধদিবস হরতাল ডাকা হয়েছে।
বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হাই জানান, পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে দুটি গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুজনকে আটক করা হয়েছে। নিহত আলমগীরের বাবা জসিম উদ্দিন থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
দেবহাটা: দেবহাটা থানার ওসি কাজী জামালউদ্দিনের ভাষ্য অনুযায়ী, বুধবার রাতে পুলিশ খবর পায়, উপজেলার খান বাহদুর আহছানুল্লাহ কলেজের পাশে জামায়াত-শিবির কর্মীরা জড়ো হয়েছে। তারা নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে, এ খবরের ভিত্তিতে তাঁর নেতৃত্বে পুলিশ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এ সময় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাঁদেরকে লক্ষ্য করে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি ছোড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে জামায়াত-শিবির কর্মীরা পালিয়ে যান। পরে ঘটনাস্থলে মিলন রহমানকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আহত কনস্টেবল সোহরাব হোসেন ও আকবর আলীকে দেবহাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ মিলনের দাবি, মঙ্গলবার রাতে ধোপাডাঙ্গা গ্রামের বাড়ি থেকে পুলিশ তাঁকে আটক করে। ওই রাত থেকে বুধবার সারা দিন তাঁকে দেবহাটা থানায় আটকে রাখা হয়। বুধবার রাতে তাঁকে থানা থেকে বের করে খান বাহাদুর আহছানুল্লাহ কলেজের পাশে নিয়ে পুলিশ তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর নিচে গুলি করে।
মিলন জানান, তিনি একসময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন আর সক্রিয় নন। তিনি এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. হাফিজুল্লাহ বলেন, অস্ত্রোপচার করে মিলনের ডান পাশের হাঁটুর নিচ থেকে চারটি গুলি বের করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।
ওসি জামালউদ্দিন জানান, গুলিবিদ্ধ মিলন আওয়ামী লীগের নেতা আবু রায়হান হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি। এ ঘটনায় দেবহাটা থানার উপপরিদর্শক ইউনুছ আলী গাজী বাদী হয়ে মিলন রহমানসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৮-১০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন।