'মিথ্যা' অভিযোগে থানায় আটকে তরুণকে নির্যাতন

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় টাকার জন্য মিথ্যা অভিযোগে থানাহাজতে আটকে রেখে মোশাররফ হোসেন নামের এক তরুণকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর মধ্যস্থতায় এক লাখ টাকা আদায় করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মোশাররফের পরিবার ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, হালুয়াঘাট উপজেলার গোপীনগর গ্রামের মো. ইদ্রিস আলীর ছেলে মোশাররফ হোসেন (২৭) পাশের ধোবাউড়া উপজেলার মেকিয়ারকান্দা বাজারে ব্যবসা করেন। ১১ এপ্রিল সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে ধোবাউড়া থানার দুজন পুলিশ এসে বাজারের একটি ওষুধের দোকান থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে গোপীনগর ও আশপাশের গ্রামের বেশ কিছু লোক থানায় গিয়ে মোশাররফকে ধরে আনার কারণ জানতে চান। ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ হক মোশাররফকে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গ্রামবাসীকে বিদায় করেন। কিন্তু ১১ ও ১২ এপ্রিল মোশাররফকে থানাহাজতে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে তাঁর পরিবার।
মোশাররফের বাবা ইদ্রিস আলী বলেন, তাঁরা হালুয়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা হয়ে ধোবাউড়া উপজেলার বাজারে ব্যবসা করায় স্থানীয় কিছু মানুষ বিরুদ্ধাচরণ করত। বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁকে ভয় দেখিয়ে বলত, মেয়েসংক্রান্ত মামলায় ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেবে। ধরে নেওয়ার পর ওসি জানান, মেকিয়ারকান্দা গ্রামের একটি মেয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মোশাররফকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোশাররফকে আদালতে না পাঠিয়ে দুই দিন থানায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
ছেলের ওপর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে মোশাররফের বাবা টাকার বিনিময়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে রাজি হন। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের যোগসাজশে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। পরে এক লাখ টাকায় রফা হয়। ওই টাকা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারার পর আরও ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। তাৎক্ষণিক ওই ১০ হাজার টাকা দিতে না পারায় ১২ এপ্রিল রাত ১০টায় মোশাররফকে ছেড়ে দিলেও লিখিত আপসনামা দেয়নি পুলিশ। তাই মোশাররফের পরিবার এখনো আতঙ্কে আছে। যেকোনো সময় আবারও মোশাররফকে ধরে নিয়ে থানায় নির্যাতন অথবা মিথ্যা মালমা দিয়ে হয়রানি করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযোগকারী হিসেবে যে মেয়ের নাম বলা হয়েছে, তিনি পেশাগত কারণে ঢাকায় থাকেন। তাঁর পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মোশাররফ এখন হালুয়াঘাট উপজেলার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মোশাররফের বাবা ইদ্রিস আলীর দাবি, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে যেন আর নির্যাতন করা না হয়। ধোবাউড়া থানার ওসি এম এ হকের কছে জানতে চাইলে তিনি শারীরিক নির্যাতন ও টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি মিটিয়ে দিয়েছেন। নির্দিষ্ট কী অভিযোগে মোশাররফকে ধরে আনা হয়েছিল, জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘মেয়েলি’ অভিযোগ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান আকন্দ ওই ঘটনার মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগের নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন।