মাঠে প্রবেশের অভিযোগে মামলা!

ধানমন্ডি মাঠের ভেতরে নির্মাণাধীন স্থাপনার পাশে গতকাল সকালে সমাবেশ করেন পরিবেশবাদী ও পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা । ছবি: প্রথম আলো
ধানমন্ডি মাঠের ভেতরে নির্মাণাধীন স্থাপনার পাশে গতকাল সকালে সমাবেশ করেন পরিবেশবাদী ও পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা । ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর ধানমন্ডির খেলার মাঠ জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার মামলা করেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। সকালে আন্দোলনকারীরা মাঠে ঢুকে সমাবেশ করার পর দুপুরে ক্লাব কর্তৃপক্ষ ফটক ভেঙে মাঠে অনধিকার প্রবেশের অভিযোগে এ মামলা করে।
ধানমন্ডি থানার পুলিশ জানায়, মাঠের ফটক ভেঙে অনধিকার প্রবেশের অভিযোগে বেলা দুইটায় শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। মামলায় স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি ইকবাল হাবিব, সালমা এ সফি, কামরুন্নাহারের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করা হয়।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ করিম মামলা হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মাঠটি উন্মুক্ত করার দাবিতে পরিবেশবাদী ও পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠন কয়েক সপ্তাহ ধরে মাঠটির পাশে সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। তবে গতকাল সংগঠনগুলো ওই মাঠেই সমাবেশ করে।
হাইকোর্টের রায় উপেক্ষা করে ধানমন্ডি মাঠে কাঠামো নির্মাণ বন্ধ এবং সর্বসাধারণের জন্য মাঠ উন্মুক্ত করার দাবিতে গতকাল সকাল নয়টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিনভয়েস।
সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি মাঠের দিকে যান গ্রিনভয়েসের কর্মীরা সেখানে আগে থেকে সমবেত হওয়া অন্যান্য সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে একত্র হয়ে তাঁরা মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি মাঠ প্রদক্ষিণ করেন। তাঁরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাঠের বন্ধ ফটক খুলে ভেতরে ঢুকে
পূর্ব পাশে নির্মাণাধীন ক্রীড়া স্থাপনায় সমাবেশ শুরু করেন। কেউ কেউ মাঠে ফুটবল খেলতে নামেন। মাঠের একেবারে পূর্ব প্রান্তে তখন আজ শনিবার ক্লাবের অনুষ্ঠানের জন্য প্যান্ডেল তৈরি চলছিল।
সমাবেশে মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ভাইয়ের (লে. শেখ জামাল) নাম ব্যবহার করে মাঠটি অবরুদ্ধ করে
রাখা হয়েছে। মাঠের ২০ বিঘা জমির মালিক ধানমন্ডি ক্লাব নয় বরং ধানমন্ডির সবাই। এ ক্লাব পরিচালনা কর্তৃপক্ষের অনেকে সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু দখলের ক্ষেত্রে সবাই একজোট হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব বলেন, ‘মাঠটি উদ্ধারে কয়েক শুক্রবার ধরে আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আজ আমরা মাঠে ঢুকে পড়েছি।’
গ্রিনভয়েসের প্রধান সমন্বয়কারী আলমগীর কবির জানান, মাঠটি এভাবে মুক্ত রাখা না হলে আগামী শুক্রবারও এ মাঠে সমাবেশ করা হবে।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সমাবেশে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, সবুজ পাতাসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ধানমন্ডি ৮ নম্বরে গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন মাঠটি একসময় সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। তবে ২০০৯ সালে ধানমন্ডি ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড করার পর মাঠটি ঘিরে দেওয়া হয়। দুই বছর ধরে মাঠে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে থাকা ওই মাঠে গত মার্চে দুটি ব্যাডমিন্টন কোর্ট, দুটি টেনিস কোর্ট ও একটি বাস্কেটবল কোর্ট নির্মাণ শুরু হয়। নির্মাণকাজ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।