২০ বছর পর নারী পুরুষ সমান হবে

এটা ২০ বছর পরের এক বাংলাদেশের স্বপ্ন। জাতীয় সংসদের অর্ধেক আসন পূর্ণ করবেন নির্বাচিত নারীরা। আজকের কারখানার নারী শ্রমিকেরা হবেন মালিকানার অংশীদার। উৎপাদিত ফসলের অর্ধেকের মালিক হবেন গ্রামীণ নারীরা। নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করলে কঠিন শাস্তি পাবেন পুরুষ।
এই বাংলাদেশের স্বপ্ন এঁকেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। গতকাল শুক্রবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এই স্বপ্নের কথা জানান তিনি। রেহমান সোবহান বলেন, তাঁর স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নারীর পাশাপাশি পুরুষ এগিয়ে এলেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব।
মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়শা খানমও রেহমান সোবহানের স্বপ্নের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, দেশে নারীর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এখনো অন্ধকার আছে, কুসংস্কারের শিকার হচ্ছেন নারী। নারীর বিরুদ্ধে ধর্মের অপব্যবহার বন্ধ হয়নি। শুধু আন্দোলন অব্যাহত থাকলেই এসব দূর হবে।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, এখন মাধ্যমিক স্তরে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী নারী। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কাই এ ধরনের অর্জনের দাবি করতে পারে। ৪০ লাখ নারী কারখানায় কাজ করছেন। ৩০ লাখ নারী ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। পুরুষ এখন বুঝে গেছেন যে নারীর মেধা, শ্রম ও অংশগ্রহণ ছাড়া সংসার চলবে না। নারীর অগ্রগতিকে ‘বিপ্লব’ আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশের দুই প্রধান নেত্রী নারী। এটা সাধুবাদ পাওয়ার মতো। তবে এটাই যথেষ্ট নয়। রাজনীতিতেও নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
জাতিসংঘের নারী বিভাগের এ দেশীয় প্রতিনিধি ক্রিস্টিন সুশান হান্টার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নারী প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের প্রশংসা করে বলেন, অধিকার রক্ষায় নারী আন্দোলন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এর আগে গতকাল বিকেলে ৪৪টি মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে সংগঠনের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। মিলনায়তনের বাইরে জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
বক্তৃতা অনুষ্ঠান শুরু হয় মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি শরিফুন্নেসা, আদিবাসী নারী টুকি চাম্বু গং, কিষানি খাদেজা খাতুন, পোশাকশ্রমিক নেতা শাহনাজ বেগম এবং মহিলা পরিষদের তৃণমূল সংগঠক হেনা চৌধুরী ও শাহানা বেগম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম। সব শেষে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।