লোকসানে ডুবছে বিমান (বাকি অংশ )

এ রকম সম্প্রতি অবসরে যাওয়া জ্যেষ্ঠ বৈমানিক ক্যাপ্টেন এস এম হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশ থেকে বেশি বেতনে তাঁদের চেয়ে বেশি বয়সীদের আনা হচ্ছে। আর, তাঁরা এ দেশের নাগরিক হয়েও এবং দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কেন সংবিধান অনুযায়ী বৈধ সুযোগ পাবেন না, সেটা বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, অথচ বিমান কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালে চাকরির বয়স ৬২ বছর করে প্রশাসনিক আদেশ জারি করেছিল। কিন্তু তাতে বাপার (পাইলট অ্যাসোসিয়েশন) সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী অনেক সুবিধা বাদ দেওয়া হয়েছিল। সেটা বৈমানিকদের জন্য অপমানজনক বলে তখন তাঁরা আন্দোলন করেন এবং প্রশাসনিক সালিসি ট্রাইব্যুনালে যান। তাতে বৈমানিকদের পক্ষে রায় এলে বিমান কর্তৃপক্ষ নিম্ন আদালতে আপিল করে। তাতেও বিমান হেরে যায়। এরপর বিমান উচ্চ আদালতে আপিল করে, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তার পরও বিমান কর্তৃপক্ষ চাইলে এখনো সরকারি আইন অনুযায়ী অথবা সিভিল এভিয়েশনের লাইসেন্সের বয়স অনুযায়ী চাকরির বয়স ৬০ বা ৬৫ করতে কোনো বাধা নেই বলে দাবি বৈমানিকদের।চেয়ারম্যানশাসিত বিমান: বিমানের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, একসময় বিমান ছিল মন্ত্রণালয়শাসিত। কোম্পানি হওয়ার পর এখন হয়েছে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানশাসিত। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার আসার পর বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন আহমেদকে বিমানের চেয়ারম্যান করা হয়। এরপর চেয়ারম্যানকে বিমানকর্মীদের নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতি, পদায়নের পূর্ণ কর্তৃত্ব দিয়ে ২০১০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্ষদের ৬৭তম সভায় সিদ্ধান্ত পাস করা হয়। এর পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একজন এমডি থাকলেও বিমানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্যক্রম চলে আসছে মূলত চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের ইচ্ছায়। এর পর থেকে বিমান আবার লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে তাঁর অপসারণের দাবিতে ২০১২ সালে বিমানের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘বিমান বাঁচাও ঐক্য পরিষদ’ গঠন করে বিক্ষোভ, সভা-সমাবেশ, ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। তৎকালীন বিমানমন্ত্রী ফারুক খানের আশ্বাসে কর্মীরা কর্মসূচি স্থগিত করেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানি হওয়ার পর পরিচালনা পর্ষদ বিমানের সর্বেসর্বা। পর্ষদ মন্ত্রণালয়কে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চায় না। পর্ষদের চেয়ারম্যান কে হবেন, তা ঠিক করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এর ফলে বিমান মন্ত্রণালয় চাইলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বাংলাদেশ বিমানের ওপর এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে ২০০৭ সালের ৮ আগস্ট। তাতে বলা হয়, বিমানের সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহি, পরিকল্পনা ও দক্ষ জনবলের অভাব প্রকট। উড়োজাহাজ কেনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি হয়েছে। ওই গবেষণাপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কোম্পানি হওয়ার পরও বিমান ব্যবসায় অভিজ্ঞ কাউকে পরিচালনা পর্ষদে রাখা হয়নি।
কথা বলবেন না চেয়ারম্যান ও এমডি: উল্লিখিত বিষয়ে বিমানের চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানতে চেয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ৭ এপ্রিল লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হয়। জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক খান মোশাররফ জানান, চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন এমডি কেভিন স্টিলকে এসব জিজ্ঞাসার জবাব দিতে বলেছেন। ৯ এপ্রিল কেভিন স্টিল জানান, এ প্রতিবেদকের পাঠানো প্রশ্নগুলোতে সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি এর জবাবের পরিবর্তে তাঁর একটা সাক্ষাৎকার প্রকাশের অনুরোধ করেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাব দিতে অনুরোধ করা হয়। এরপর ১৩ এপ্রিল যোগাযোগ করা হলে জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়, কেভিন বলেছেন, তিনি বিমান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তাই কোনো কথা বলতে রাজি নন।

লাভ কোটি টাকায়
২০০৩-০৪ ৩৪.০৫
২০০৭-০৮ ৫.৯১
২০০৮-০৯ ১৫.৫৭

লোকসান কোটি টাকায়
২০০১-০২ ৭৩.৭৩
২০০২-০৩ ৪৪.২৮
২০০৪-০৫ ১৯১
২০০৫-০৬ ৪৫৪
২০০৬-০৭ ২৭২.১৯
২০০৯-১০ ৪৬.০২
২০১০-১১ ১৯৯.৪৯
২০১১-১২ ৬০৫
২০১২-১৩ ১৯৩
২০১৩-১৪ ২২২
(প্রথম ৬ মাস)

 চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের লোকসান ছাড়িয়ে গেছে আগের বছরকে
 দুর্নীতি ও অদক্ষতা, চেয়ারম্যানকে ঘিরে সক্রিয় সুবিধাবাদী গোষ্ঠী
 বৈমানিকদের নিয়ে আত্মঘাতী কারসাজি