আন্দোলন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত দুই পথে

সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের ১৯-দলীয় জোটের মিত্র জামায়াতে ইসলামীর মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এ ইস্যুতে দল দুটি হাঁটছে পরস্পরের বিপরীতে। বিএনপি চলতি বছরের শেষ দিকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর জামায়াত শিগগিরই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে তৈরি হচ্ছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর জামায়াতের নীতিনির্ধারকেরা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখছেন না। বিএনপির পক্ষ থেকে আন্দোলন নিয়ে জামায়াতের অবস্থান জানতে চাওয়া হলেও দলটির পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। ফলে জোটগতভাবে সরকার-বিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে এ পর্যন্ত অগ্রগতি করতে পারেনি বিএনপি।
বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার ১৯-দলীয় জোটের বৈঠকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতকে আন্দোলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে বলেন। বৈঠকে উপস্থিত দলটির এক নেতা বলেন, জামায়াত নির্দলীয় সরকারের দাবিকে আপাতত দ্বিতীয় সারিতে রেখেছে। এখন তাদের সব মনোযোগ দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়ের দিকে। এর মধ্যে আপিল বিভাগের রায়ে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে, এমনটা ধরে নিয়ে বড় ধরনের সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখাতে জামায়াত প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলে বিএনপিকে জানানো হয়েছে। আর এ নিয়েই মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে দুই মিত্রের মধ্যে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, জামায়াত শিগগিরই আন্দোলনে নামার প্রস্তুতির বিষয়টি তাঁদের অবহিত করেছে। ওই নেতা আরও বলেন, মে মাসের শেষে বা জুনে সাঈদীর মামলার রায় হতে পারে। ওই সময় জামায়াত ধ্বংসাত্মক ও রক্তাক্ত কর্মসূচিতে ঢুকে গেলে এরপর আর ১৯-দলীয় জোটের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন, সর্বশেষ উপজেলা ও একটি উপনির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের ‘কারচুপির’ পর বিএনপির তোলা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির যৌক্তিকতা সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি জোরালো হয়েছে। তাদের জোটের দলগুলোকে তাই এই দাবিতে জোরালো ভূমিকা নেওয়া উচিত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির চারজন সদস্য ও তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী নিয়ে জামায়াতের আন্দোলনের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নেই। জোটগতভাবে তাঁরা কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্দোলন করবেন। এ ব্যাপারে জামায়াত ও জোটের অন্য শরিকদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আন্দোলনে সমন্বয়ের জন্য কোন দল কী করছে বা করবে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ১৯-দলীয় জোটের দাবি হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া। বিএনপি এই একটি দাবিতে আন্দোলন করছে। তার নেতৃত্বাধীন শরিক দলগুলো এর বাইরে নিজ নিজ ইস্যুতে আন্দোলন করতে পারে। এর সঙ্গে বিএনপি বা জোটের আন্দোলনের সম্পর্ক থাকবে না।