গ্রামের স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান খুলতে ভয়

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় চারটি কলেজ। ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালের মধ্যে চার কিলোমিটার এলাকায় তিনটি কলেজ চালু হওয়ায় এমনিতেই ওই এলাকায় শিক্ষার্থীর সংকট।
এর মধ্যে বিজ্ঞান খুললে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্বে টান পড়বে বলে আশঙ্কা ওই সব কলেজ কর্তৃপক্ষের। গত ফেব্রুয়ারিতে সেখানে গেলে শিক্ষকদের কয়েকজন জানালেন এমন আশঙ্কার কথা।
১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় হাজী শরীয়তউল্লাহ কলেজ। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক বা ডিগ্রিতে আজও বিজ্ঞান চালু হয়নি।
কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিজ্ঞান চালু করলে চারজন শিক্ষক নিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দুই বছর তাঁদের বেতন দিতে হবে কলেজ থেকে। বেতন, বিজ্ঞানাগারসহ সব মিলিয়ে দুই বছরে খরচ হবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু ছাত্র পাওয়া যাবে ১০ থেকে ১৫ জন।
কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশার আল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিজ্ঞান না থাকা মানে অপূর্ণাঙ্গ শিক্ষা। কিন্তু মফস্বলের একটি কলেজকে আর্থিক বাস্তবতা, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়।’
ঢাকা বোর্ডের গত বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৬২টি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের পরীক্ষার্থী ছিল না। ওই বোর্ডের আওতায় মোট বিদ্যালয় চার হাজার ৮১টি।
২০১৩ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায়ও একই বোর্ডের ১৫৭টি কলেজে বিজ্ঞানশিক্ষা ছিল না। ওই বোর্ডে মোট কলেজ ৯০৬টি। ঢাকা ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডে বিজ্ঞানবিহীন স্কুল-কলেজ রয়েছে। তবে কোথাও মানবিক ও বাণিজ্য ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই।
অবশ্য ঢাকায় বড় ও নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানশিক্ষার চিত্র অনেকটাই ভালো। ভিকারুননিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞানে পড়ার যোগ্যতা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এ জন্য আগ্রহ থাকলেও অনেকে বিজ্ঞান পড়তে পারে না। এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিদ্যালয়টির এক হাজার ৩৯৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিল এক হাজার ১৩২ জন।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মঞ্জু আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বিজ্ঞান পড়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও গণিতে এ প্লাস পাওয়াসহ কিছু শর্ত রয়েছে।
খুলনা জিলা স্কুলেও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। সেখানে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাণিজ্যের প্রায় তিন গুণ।
অন্যদিকে ঢাকার বংশাল গার্লস হাইস্কুলে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে ৪৭ জন ছাত্রী। কিন্তু এদের মধ্যে একজনও বিজ্ঞানের ছাত্রী নেই।
এই দুরবস্থার কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ জিন্নাত-উস-সালেহা প্রথম আলোকে জানান, ‘এখন বাণিজ্য পড়ার হুজুগ চলছে। তা ছাড়া বিজ্ঞান পড়ার সঙ্গে মেধা, পরিশ্রম, গবেষণাগার, যোগ্য শিক্ষক, প্রাইভেট পড়া, অর্থ ব্যয় করাসহ বিভিন্ন বিষয় জড়িত। তার পরও থাকে চাকরির অনিশ্চয়তা।’