তিস্তায় পানি আনতে পারবে না সরকার: ফখরুল

কালিয়াকৈরে পথসভায় মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন। ছবি: মাসুদ রানা
কালিয়াকৈরে পথসভায় মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন। ছবি: মাসুদ রানা

ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে তিস্তা অভিমুখে বিএনপির লংমার্চ চলছে। কালিয়াকৈর ও টাঙ্গাইলে পথসভা করেছে বিএনপি। লংমার্চ এখন সিরাজগঞ্জের পথে। টাঙ্গাইলের পথসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, বর্তমান সরকার ভারতের কাছ থেকে তিস্তা নদীতে পানি আনতে পারবে না। কারণ দরকষাকষির জন্য বাংলাদেশের হাতে থাকা সব হাতিয়ার তারা ভারতকে দিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা ৫৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর উত্তরা দিয়ে দুদিনের এই কর্মসূচি শুরু হয়। উত্তরার আজমপুর ওভার ব্রিজের কাছে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে লংমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
উত্তরা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রায় অর্ধশত গাড়ি নিয়ে লংমার্চে অংশ নেন। লংমার্চে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি। এর কারণ হিসেবে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি এবং প্রচণ্ড দাবদাহের কথা বলছেন নেতা-কর্মীরা।
উত্তরা: উত্তরার আজমপুরে লংমার্চের উদ্বোধনী বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই লংমার্চ সরকারের বিরুদ্ধে নয়। এর উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা, যেন তারা ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে আরও জোরালো অবস্থান নিতে পারে।’

তিস্তা নদীতে ন্যায্য পানি দিতে ভারতকে চাপ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তিস্তা নদীতে ন্যায্য পানি দিতে বাধ্য করতে আপনারা ভারতকে চাপ দিন।’
এ ছাড়া ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য পানি পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের যৌক্তিক দাবিটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করাও এই লংমার্চের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানান মির্জা ফখরুল।
বাংলাদেশের মানুষের কথা বিবেচনা করে, ন্যায্য দাবি অনুযায়ী তিস্তা নদীতে পানি দেওয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

কালিয়াকৈর: উত্তরা, টঙ্গী, জয়দেবপুর, কোনাবাড়ী হয়ে কালিয়াকৈর এলাকায় আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম পথসভা করেন লংমার্চে অংশ নেওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
সেখানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের ৫৪টি নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এগুলো আন্তর্জাতিক নদী। তাই নদীর ন্যায্য হিস্যা পাওয়া আমাদের অধিকার। এই সরকার আমাদের অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে।’ যারা অধিকার আদায়ে ব্যর্থ, তাদের উত্খাত করতে হবে। ভবিষ্যতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। সেই আন্দোলনে অংশ নিতে এখনই সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।

বিএনপির লং মার্চে বক্তব্য রাখছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: ফোকাস বাংলা
বিএনপির লং মার্চে বক্তব্য রাখছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: ফোকাস বাংলা

টাঙ্গাইল: কালিয়াকৈরে পথসভা শেষে লংমার্চ থেকে টাঙ্গাইলে দ্বিতীয় পথসভা হয়। সেখানে মির্জা ফখরুল দাবি করেন, বর্তমান সরকার ভারতের তাঁবেদার। এ সরকার তিস্তা নদীতে পানি আনতে পারবে না। চুক্তি করতে পারবে না। কারণ দরকষাকষির জন্য বাংলাদেশের হাতে যে হাতিয়ার ছিল, সব তারা ভারতকে দিয়ে ফেলেছে। তাই এই সরকারকে হটিয়ে একটি দ্রুত নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কর্মসূচি: আজ সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে তৃতীয়, বগুড়ায় চতুর্থ ও গাইবান্ধায় পঞ্চম পথসভা করবে বিএনপি। আজকের কর্মসূচি শেষে রংপুরে অবস্থান করবেন লংমার্চে অংশ নেওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পরদিন বুধবার সকাল নয়টায় রংপুরে জনসভা হবে। সেখান থেকে লংমার্চ তিস্তা ব্যারাজ অভিমুখে রওনা দেবে। বেলা ১১টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া এলাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে লংমার্চ শেষ হবে।

বড় কর্মসূচি: গত ১২ জানুয়ারি নতুন মেয়াদে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর বিএনপি এই প্রথম বড় কোনো কর্মসূচি পালন করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের কথা বলা হয়েছে। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুতি নিয়েছে।

প্রস্তুতি: লংমার্চ সফল করতে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। যাত্রাপথের এবং উত্তরাঞ্চলের মোট ১৬টি জেলার নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোটের শরিক দলগুলো লংমার্চে সমর্থন দিয়েছে।

ভারতের কাছ থেকে পানির দাবিতে বিএনপি এই কর্মসূচি দিলেও এর মাধ্যমে সরকারবিরোধী ও সরকার পতনের কথাই বলছে দলটি। দলটি মনে করছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকলে তিস্তা চুক্তি হবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল গত রোববার এক গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, লংমার্চের দুটি দিক আছে। তা হলো, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং সেই সরকারকে দিয়ে ভারতের কাছ থেকে পানির হিস্যা আদায় করা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা অবশ্য বলেছেন, এই লংমার্চের মধ্য দিয়ে তাঁরা প্রগতিশীল দলগুলোর কাছে যেতে চান। এ জন্য কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ইতিমধ্যে বাম ধারার দুটি রাজনৈতিক মোর্চা তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ করেছে। ওই দলগুলো তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য ভারতের ব্যাপারে বর্তমান সরকারের নতজানু অবস্থানকে দায়ী করেছে। সভা-সমাবেশে বিএনপিও একই কথা বলে আসছে।