উপজেলায় অনিয়ম খুঁজে পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন

চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে অনিয়ম পায়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের আগের রাতে এবং ভোটের দিন ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হলেও ইসির তদন্ত কর্মকর্তারা এমন কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সাংসদ, চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তারা। এ কারণে কমিশন সচিবালয়ের মাঠ কর্মকর্তারা সব জায়গায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাচ্ছেন। তবে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের অনেকে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী অনিয়ম প্রতিরোধে ইসি কার্যকর পদক্ষেপও ছিল না।
জানতে চাইলে কমিশন সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখনো পর্যন্ত পাওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে নির্বাচনে অনিয়মের প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। কারণ, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ভয়ে কিছু বলতে চাইছেন না।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জসহ মোট ২০টির মতো জেলা থেকে কমিশন সচিবালয়ের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা নির্বাচনী অনিয়ম তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। কেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ব্যালট পেপার ছিনতাই, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়াসংক্রান্ত কোনো অনিয়ম খুঁজে পাননি তাঁরা। বাকি জেলাগুলোর প্রতিবেদনও একই রকম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অথচ এবারের নির্বাচনে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে ভোট জালিয়াতি ও ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে, যা ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর আর কখনো দেখা যায়নি। এবার নির্বাচনী সহিংসতায় মোট ১০ জন নিহত ও কয়েক শ লোক আহত হন। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ছিল।
এ মাসের শুরুতে ইসি উপজেলা নির্বাচনের অনিয়ম তদন্তের জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়ে চিঠি দেয়। চিঠিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের কেউ নির্বাচনী অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে তা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে বলা হয়। তখন কমিশন থেকে বলা হয়েছিল, জেলা প্রশাসক বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকেরা সরকারের নির্বাহী বিভাগের অংশ বিধায় তাঁদের তদন্ত নিরপেক্ষ হবে না। সে জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কমিশন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, খুলনা, ঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৪০টির মতো জেলার নির্বাচন কর্মকর্তাদের এ চিঠি দেয়। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ৮০টি প্রতিবেদন এবং কমিশন সচিবালয়ে পাঠানো বিভিন্ন প্রার্থীর অভিযোগ আমলে নিয়ে মোট ১৩০টির মতো অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।