২২ জনের কাজ করেন একজন

চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি বা কেন্দ্রীয় ওষুধ পরীক্ষাগারের ৭২ শতাংশ পদ শূন্য। ২২ জনের কাজ করছেন একজন। আর এই একজন সহকারী জীবাণুবিদের ওপর নির্ভর করে চলছে ওষুধের মান পরীক্ষার কাজ। পরীক্ষাগারে পাঠানো ওষুধের অর্ধেকেরই মান যাচাই করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, খুঁড়িয়ে চলা এই প্রতিষ্ঠানের অনেক সম্পত্তি ইতিমধ্যে বেদখল হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকমতো অফিসে আসেন না। পরিচালক এ ও মুশফিকুর রহমান বলেন, জনবল নিয়োগ দেওয়া ও বেহাত সম্পত্তি ফেরত নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
২৪ এপ্রিল বেলা দুইটায় আগ্রাবাদে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেউ নেই। মূল পরীক্ষাগার ও পরিচালকের কক্ষ খোলা। অন্য কক্ষগুলো বন্ধ, তবে তালা দেওয়া নয়। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে একজন কর্মকর্তা জানান, তিনি একটু আগে খেতে বাসায় গেছেন, এক্ষুনি অফিসে ফিরবেন।
ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পরিচালকসহ ছয়জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ফিরে আসেন। সূত্র জানায়, এই প্রতিষ্ঠানে জীবাণুবিদ, ওষুধবিদ, রসায়নবিদসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ আছে ৪৩টি। পরিচালক জানালেন, ৩১টি পদই শূন্য। মাত্র ১২ জন জনবল দিয়ে চলছে কেন্দ্রীয় এই ওষুধ পরীক্ষাগার।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ওষুধের মান জানার জন্য সরকারি পরীক্ষাগার আছে দুটি। একটি ঢাকায়, একটি চট্টগ্রামে। বন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামালের মান পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামের এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হয়েছিল ১৯৬৬ সালে।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল কাজ করেন জীবাণুবিদ, ওষুধবিদ ও রসায়নবিদেরা। এঁদের পদ আছে ২২টি। এর মধ্যে ২১টি পদই শূন্য। মাত্র একজন সহকারী জীবাণুবিদ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব কাজ করছেন।
জনবল সংকটের কারণে ওষুধের নমুনার মান পরীক্ষায় জট লেগে আছে বহু দিন ধরে। ঢাকা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে এবং ওষুধ প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো নমুনার সবগুলোর মান পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিচালক জানান, ২০১৩ সালে পরীক্ষাগারে ৮৯৩টি ওষুধের নমুনা জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ৪৬৬টি নমুনার মান জানা সম্ভব হয়েছিল।
কর্মকর্তারা পরীক্ষাগার ঘুরিয়ে দেখিয়ে বলেন, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় রাসায়নিকের কমতি নেই। জনবলের অভাবে সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। অন্যদিকে দোতলায় গিয়ে দেখা যায়, বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে আছে। প্রভাবশালী চিকিৎসকেরা ওই হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁদের সরাতে পারছেন না সরকারি কর্মকর্তারা।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) নূরুল হক দাবি করেন, ‘সরকার আমাদের এই জায়গা দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত দিয়েছে।’