লাশ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষায় ছয় মাস লাগতে পারে

DNA
DNA

সাভারে রানা প্লাজা ধসে নিহত অজ্ঞাতপরিচয়ের ২২২ জনকে শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ছয় মাসের মতো সময় লাগতে পারে। লাশের সংখ্যা বাড়লে সময় আরও প্রয়োজন হবে। গত ২৪ এপ্রিল সাভারে নয়তলা রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে গত রোববার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১২৭ জন। ২৯৩ জনের লাশ শনাক্ত হয়নি। এর মধ্যে ২৩৪ জনকে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আর হস্তান্তরের অপেক্ষায় বাকি লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার কাজটি চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষাগারে। ভবনধসের ছয় দিন পর আত্মীয় শনাক্ত করার জন্য প্রথম রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দৈনিক গড়ে ৩০ জন আত্মীয় রক্তের নমুনা দিচ্ছেন।

পরীক্ষাগার সূত্র জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত অজ্ঞাতপরিচয়ের লাশের আত্মীয় দাবি করে সেখানে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ৪৮০ জন রক্ত দিয়েছেন। আর সরকারের পক্ষ থেকে ২২২ জন মৃত ব্যক্তির নমুনা দেওয়া হয়েছে। এসব নমুনার মধ্যে রয়েছে দাঁত, টিস্যু, চামড়াসহ চুল ও হাড়।

পরীক্ষাগারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশীষ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, মৃত ব্যক্তির নমুনার ডিএনএ রূপরেখা (ডিএনএ প্রোফাইল) পেতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগবে। আর আত্মীয় দাবি করে যাঁরা রক্তের নমুনা দিয়েছেন, তাঁদের ডিএনএ রূপরেখা তৈরির কাজও ওই সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে। পরে এই দুই ধরনের রূপরেখা মিলিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, আশা করা হচ্ছে, পুরো কাজ ছয় মাসের মধ্যে শেষ হবে।

এত সময় কেন লাগতে পারে প্রশ্নের জবাবে আশীষ বলেন, কারিগরি দিক থেকে এখনো পরীক্ষাগারটি কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। আর লোকবলের স্বল্পতাও রয়েছে। এ জন্য সময় বেশি লাগতে পারে। গত বছর তৈরি পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডে আগুনে পুড়ে শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনায় সরকার ৫৯ জনের দাঁত, টিস্যু, চামড়াসহ চুল বা হাড়ের নমুনা পাঠিয়েছিল ডিএনএ পরীক্ষার জন্য।সূত্র বলছে, এই ৫৯ জনকে নিকট আত্মীয় দাবি করে ৭৩ জন রক্ত দিয়েছিলেন নিজেদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য। এর মধ্যে ৪৭ জনের ডিএনএ রূপরেখায় মিল পাওয়া যায়। ফলে ৪৭ জনের পরিচয় নিশ্চিত হতে পেরেছিল সরকার। পুরো কাজটি শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় তিন মাস।

ডিএনএ রূপরেখা: ডিএনএ রূপরেখা হচ্ছে মানুষের বংশগতির চিত্র যা সাধারণত সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষাগারে এ চিত্র পেতে ১৬টি নির্দেশক (এসটিআর মার্কার) ব্যবহার করা হয়।

অজ্ঞাত পরিচয়ের মৃত ব্যক্তির ডিএনএ রাসায়নিক বিশ্লেষণ করলে একটি নির্দেশকের বিপরীতে দুটি পৃথক সংখ্যা পাওয়া যায়। একটি সংখ্যা একটি বৈশিষ্ট্যের পরিচয় বহন করে। ১৬টি নির্দেশক থেকে ৩২টি সংখ্যা পাওয়া যায়। এই ৩২টি সংখ্যাই ব্যক্তির ডিএনএ রূপরেখা। এর ভিত্তিতে ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হয়। রোগ নির্ণয় বা অন্য ক্ষেত্রে নির্দেশক ভিন্ন, ডিএনএ রূপরেখাও ভিন্ন। একইভাবে আত্মীয়ের দাবিদার ব্যক্তির ডিএনএ রাসায়নিক বিশ্লেষণ করলে ৩২টি সংখ্যা বা ডিএনএ রূপরেখা পাওয়া যায়। মৃত এবং আত্মীয়ের দাবিদার ব্যক্তির ডিএনএ রূপরেখা তুলনা করা হয়। সংখ্যাগুলো একই হলে নিকট আত্মীয় প্রমাণিত হয়। এর মাধ্যমে অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) হচ্ছে প্রতিটি জীবের বংশগতির ধারক ও বাহক। কোষের অভ্যন্তরে থাকে নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসে থাকে ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোম গঠিত ডিএনএ দিয়ে। আর জিন হলো ডিএনএর একটি নির্দিষ্ট অংশ, যা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য যেমন, চোখের রং, চুলের রং ইত্যাদির জন্য দায়ী।