সি-ট্রাক বারবার বিকল মনপুরা কার্যত বিচ্ছিন্ন

চলাচলের একমাত্র নৌযান এসটি শেখ জামাল নামের ​সি​-ট্রাক বন্ধ থাকায় ভোলার নদীবেষ্টিত উপজেলা মনপুরার লক্ষাধিক মানুষ কার্যত বন্দী৷ অবৈধ ট্রলারমালিকদের সঙ্গে ইজারাদার-মাস্টার যোগসাজশ করে বারবার সি-ট্রাক বিকল করে রাখছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়াসহ মনপুরাবাসী ভোলা-৪ (মনপুরা-চরফ্যাশন) আসনের সাংসদ, পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে বিষয়টি জানিয়েছেন৷ জানতে চাইলে উপমন্ত্রী বলেন, বারবার তদর করে মনপুরা-তজুমদ্দিন রুটে সি-ট্রাক চালু করলেও অজ্ঞাত কারণে সি-ট্রাক বিকল হচ্ছে। মনপুরার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সি-ট্রাকটি সব সময় সচল রাখা দরকার; অথচ বিআইডব্লিউটিসি সেটি বোঝার চেষ্টা করছে না৷

সি-ট্রাকটি সর্বশেষ ৩ মে বিকল হয়। মনপুরার বাসিন্দা আবদুল্লাহ জুয়েল বলেন, সাগর মোহনার মেঘনা নদীতে এখন উত্তাল ঢেউ। নতুন কেউ ট্রলারে উঠলেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন৷ তবু ঝুঁকি নিয়েই উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছে মানুষ। গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য জেলা শহরে পাঠানো যাচ্ছে না৷
মনপুরা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১০ সাল থেকেই সি-ট্রাকটি ঘন ঘন বিকল হচ্ছে৷ এটি বন্ধ হওয়ার পেছনে ইজারাদার ও সি-ট্রাকের কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে; নইলে বারবার বিকল হচ্ছে কেন? উপজেলার হাজীরহাট ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আমির হোসাইন বলেন,সি-ট্রাক বন্ধ হওয়ায় উপজেলা থেকে নিরাপদে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই৷
ইউএনও আবদুল্লাহ আল বাকী বলেন, ‘ সি-ট্রাক না চলায় আমার সব কার্যক্রম প্রায় বন্ধের পথে।’
মনপুরা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,সি-ট্রাক বন্ধ হলে এই নৌরুটে কয়েকজন মাঝির ট্রলারে লোকজন ও ব্যবসায়িক পণ্য আনা-নেওয়া করা হচ্ছে৷ প্রতিদিন তাঁরা ২০-৩০ হাজার টাকা আয় করছেন।
অভিযোগ রয়েছে,সি-ট্রাক বন্ধ রাখার জন্য প্রতিদিন এর ইজারাদার ও মাস্টার-ড্রাইভারকে ট্রলারের মাঝিরা চার-পাঁচ হাজার টাকা দিচ্ছেন।
ইজারাদার নুরুদ্দীন বলেন,সি-ট্রাক বন্ধ থাকায় শীত মৌসুমে এই রুটে লঞ্চ চলেছে; ১৫ মার্চের পর অশান্ত মৌসুমে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হলেও সি-ট্রাক আসেনি৷ ওপরের চাপে কর্তৃপক্ষ একটি বিকলসি-ট্রাক মনপুরা রুটে পাঠিয়েছে, যা ১৯ মার্চ থেকে ৩ মে পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ বার বিকল হয়েছে। আর চলেছে মাত্র ১০ দিন৷ এ জন্য দায়ী বিআইডব্লিউটিসির প্রকৌশল বিভাগ ও সি-ট্রাকের মাস্টার-ড্রাইভার। তাঁরা সংস্কারের নামে দুই হাতে লুটপাট করছেন।
মাস্টার আবদুল জলিল বলেন, তিনি ট্রলারমালিকদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি; মালিকপক্ষ নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, সি-ট্রাকের দুটি ইঞ্জিন সংস্কার করতে হবে৷ কিন্তু প্রকৌশল বিভাগ সেটি করছে না।
বিআইডব্লিউটিসির প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম লস্কর বলেন, ‘ইঞ্জিন সংস্কারের জন্য আমরা চাহিদাপত্র দিয়েছি, কিন্তু পরিচালক অর্থ ছাড় করছেন না; দরপত্রও ডাকছেন না৷ ফলে সি-ট্রাকটি সংস্কার করতে বিলম্ব হচ্ছে৷ অন্যদিকে খিজির-৫ ও সুকান্ত বাবু নামে দুটি নতুন সি-ট্রাক নির্মাণের কাজ অর্থাভাবে আটকে আছে৷’
বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (অর্থ) শাহিনুর ভূঁইয়া বলেন, ‘মনপুরা রুটের সি-ট্রাকে বছরে আয় হয় চার লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সারা বছর সংস্কারেই খরচ হয় সাত-আট লাখ টাকা। এরপর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আছে। আমার ধারণা, সংস্কারের নামে ঘাপলা হচ্ছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, এ জন্য একটু বিলম্ব হচ্ছে।’
বিআইডব্লিউটিসির উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) নুরুল আলম আখন্দ বলেন, ‘খুব দ্রুত সি-ট্রাকটি চালুর চেষ্টা করছি।’