উন্নয়নের নামে ডিসি হিলের সৌন্দর্য নষ্ট করা যাবে না

চট্টগ্রামের ডিসি হিলের উন্নয়ন হলে এই সবুজ প্রকৃতি থাকবে তো—স্থানীয় লোকজন, সুশীল সমাজ ও নগর পরিকল্পনাবিদেরা এমনটাই ভাবছেন। গতকাল বিকেলে তোলা ছবি । প্রথম আলো
চট্টগ্রামের ডিসি হিলের উন্নয়ন হলে এই সবুজ প্রকৃতি থাকবে তো—স্থানীয় লোকজন, সুশীল সমাজ ও নগর পরিকল্পনাবিদেরা এমনটাই ভাবছেন। গতকাল বিকেলে তোলা ছবি । প্রথম আলো

উন্নয়ন বা সংস্কারের নামে ডিসি হিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্ষুণ্ন করা যাবে না। ধ্বংস করা যাবে না এই পাহাড়ের জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য। তবে সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই পার্কের উন্নয়ন দরকার। এই মত দিয়েছেন চট্টগ্রামের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও নগর পরিকল্পনাবিদেরা।
ডিসি হিলের উন্নয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও জেলা প্রশাসনের মুখোমুখি অবস্থানের প্রেক্ষাপটে তাঁরা প্রথম আলোর কাছে এই অভিমত জানালেন।
গত ৫ মার্চ গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ডিসি পাহাড় পরিদর্শন করে এর উন্নয়ন ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব সিডিএকে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সিডিএ এই পার্কের উন্নয়নের প্রকল্প প্রস্তাব গত ২৮ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে পাঠায় এবং ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামের স্থানীয় দৈনিকে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, এই পার্কের উন্নয়নে ছয় কোটি ৬৫ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিডিএ। পার্কে হাঁটাপথ (ওয়াকওয়ে), বসার গ্যালারি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, খাবারের দোকান ও শৌচাগার নির্মাণ করা হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে গত মঙ্গলবার চিঠি ও বৃহস্পতিবার আইনি নোটিশ দেয় সিডিএকে। খাবারের দোকান করলে ডিসি হিলের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, দু-একটা শৌচাগার নির্মাণ করা যেতে পারে। খাবারের দোকান ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপনের কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো অন্য কোথাও স্থাপন করুক। উন্নয়ন করতে হলে ডিসি পাহাড়ের সবুজ পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখেই করতে হবে।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, ‘ডিসি হিলে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপন চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। এ দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে। এ জন্য পাহাড়ের নান্দনিক সৌন্দর্যের ক্ষতি না করে সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়ন করতে হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, ‘ডিসি হিল ছাড়া চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রে জনসাধারণের জন্য কোনো উন্মুক্ত স্থান নেই। তাই জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের বাসা অন্য জায়গায় স্থানান্তর করে ডিসি পাহাড়কে সম্পূর্ণ জনসাধারণের কাজে লাগালে ভালো হয়।
নগরের নন্দনকাননে অবস্থিত ডিসি পাহাড় চট্টগ্রামের প্রধান বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। প্রতিদিন হাজারো নগরবাসী সকাল-বিকেল-সন্ধ্যায় শরীরচর্চা ও হাঁটাহাঁটি করেন। এখানকার মুক্তমঞ্চে দীর্ঘদিন ধরে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য বাংলা বর্ষবরণ উৎসব হয়ে আসছে। এর পাশাপাশি সারা বছরই নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয় এখানে।
সিডিএর কাছে দেওয়া চিঠিতে জেলা প্রশাসন বলেছে, ব্রিটিশ আমল থেকে বাড়ি দুটি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের বাসভবন হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে অবহিত না করে কিংবা নোটিশ না দিয়ে দুটি বাসভবনের জমিতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি, অনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জেলা প্রশাসন দরপত্র কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমার জায়গা, আমার জমিতে প্রকল্প করা হবে, আমি জানব না এটা তো হয় না। প্রতিটি কাজের একটি নিয়ম আছে। সমঝোতা এবং আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুই হতে পারে। কিন্তু আমার সঙ্গে সামান্যতম আলোচনা না করেই দরপত্র আহ্বান করা হয়। এখন ডিসি হিসেবে আমি যদি আমার জায়গা রক্ষা করতে না পারি, তাহলে পরের জমি কীভাবে আমি রক্ষা করব?’
সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম প্রথম আলোকে বলেন, এই জায়গার মালিক চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। উন্নয়ন করতে তাদের সম্মতি লাগবে। আলাপ-আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।