রংপুরে সেই শিশুসদন নির্মাণে অনিয়মের সত্যতা মিলেছে

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় শিশুসদনের দুটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল জাবেদের সরেজমিন তদন্ত শেষে দেওয়া প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে৷ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হয়নি। নকশা অনুযায়ী পাঁচতলা ডরমিটির ভবন দুটি নির্মিত হয়নি। ভবন দুটি প্রস্থে ৫৬ ফুট ৬ ইঞ্চি থাকার কথা থাকলেও তিন ফুট কম পাওয়া গেছে। তবে একটি চারতলা স্কুল কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভবন নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়েছে৷ তবে ভবন তিনটির ১৫০টির মতো দরজার উপকরণ গামারি ও শিলকড়ই কাঠ দিয়ে তৈরি করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি৷ অত্যন্ত নিম্নমানের কাঠ দিয়ে তৈরি করায় ইতিমধ্যে দরজাগুলো বাঁকা হয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরবরাহ করা ২৫০টি বৈদ্যুতিক পাখায় কোনো ব্র্যান্ডের নাম পাওয়া যায়নি। নিম্নমানের ৫৭টি সৌরবিদ্যুতের প্যানেল সরবরাহ করা হলেও তা দিয়ে বৈদ্যুতিক পাখা চালানো সম্ভব হয় না। ভবনগুলোর বাইরে কয়েকটি স্থানে সূক্ষ্ম ফাটল দেখা দিয়েছে, যা রং দিয়ে ঢেকে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া, একটি ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে, যার কিছুটা দেবে গেছে।
গত বছরের ১৪ জুন প্রথম আলোয় ‘হস্তান্তরের আগেই ঠিকাদারের বিল পরিশোধ: শিশুসদনের ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
রংপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক ও শিশুসদন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হারুন-অর-রশিদ (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, ত্রুটিপূর্ণ এ ভবন নির্মাণের দায়দায়িত্ব স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি)।
কাজে অনিয়ম করায় গত বছরের ২২ অক্টোবর প্রকল্প কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন এলজিইডি রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ তিন প্রকৌশলী ও তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রংপুরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে মামলা করেন৷ বিচারক হাসান শহীদ ফেরদৌস মামলাটি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেন।
দুদক রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক কামরুল আহসান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে ঘটনাটি এখনো তদন্তাধীন।
রংপুর সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের বল্লভ বিশু গ্রামে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় আট কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি পাঁচতলা ডরমিটির ভবন এবং একটি চারতলা স্কুল কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়৷ দরপত্র অনুযায়ী ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজ শেষ করে হস্তান্তর করার কথা৷ কিন্তু নানা অনিয়মের অভিযোগের কারণে যথাসময়ে ভবন হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি৷ গত বছর ১৪ মে ত্রুটিপূর্ণ ভবন হস্তান্তর করা হয়।
এ ব্যাপারে এলজিইডি রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘ভবন অনেক আগে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে আর কিছু বলার নেই।’