শুরুতেই কোটা নির্ধারণ নিয়ে ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা

কোটা পদ্ধতির কারণে বিসিএস পরীক্ষায় মেধাবীরা এমনিতেই সংকটে থাকেন। আবার এই পদ্ধতির কারণে সরকারের অনেক পদ বছরের পর বছর শূন্য পড়ে থাকে। বারবার পরীক্ষা নিয়েও এসব পদ পূরণ করা যায় না। এ পরিস্থিতিতে এবার ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পর্যায় থেকেই কোটা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। তাতে মেধাবীদের একটা বড় অংশ শুরুতেই সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এত দিন প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর চূড়ান্ত পর্যায়ে কোটা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হতো। কিন্তু এবার প্রিলিমিনারিতেই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে।
পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, এর ফলে কম নম্বর পেয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা, আদিবাসী ও নারী কোটায় লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়ে যাবেন। আর অপেক্ষাকৃত বেশি নম্বর পেয়েও এই কোটার বাইরের অনেকে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। তবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) শিক্ষার্থীদের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে বলেছে, প্রিলিমিনারি থেকে এবার কোটা ঠিক করা হলেও মেধাবীরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
জানতে চাইলে ৩৪তম বিসিএসের দায়িত্বে থাকা পিএসসির সদস্য মুহম্মদ লিয়াকত আলী খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৌখিক পরীক্ষার পর কোটা ঠিক করতে গিয়ে দেখা যায় অনেক পদ শূন্য পড়ে থাকে। প্রার্থী থাকে না। সে কারণে এবার প্রিলিমিনারি পর্যায় থেকেই যে কোটায় যতগুলো পদ আসে তার বিপরীতে প্রার্থী নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তবে কাট নম্বর (একটি নির্দিষ্ট নম্বর যার বেশি পেলে লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়) সবার একই রাখা হয়েছে। ফলে মেধাবীদের শুরুতেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই। আইনের বাইরে গিয়ে পিএসসি কিছু করেনি বলেও দাবি করেন এই সদস্য।
সাধারণ ক্যাডারের ৪৪২টি পদসহ মোট দুই হাজার ৫২টি পদে নিয়োগ দিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ৩৪তম বিসিএসের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। দুই লাখ ২১ হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী এই পরীক্ষার জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। গত ২৪ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এক লাখ ৯৫ হাজার পরীক্ষার্থী এতে অংশ নেন। গত সোমবার এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় এবং মোট ১২ হাজার ৩৩ জন উত্তীর্ণ হন।
ফল প্রকাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শ্যামল কান্তি বিশ্বাস বলেন, তিনি যে পরীক্ষা দিয়েছেন তাতে তিনি ৮০-এর ওপরে নম্বর পাবেন বলে আশা ছিল। কিন্তু তিনি উত্তীর্ণ হননি।
একই প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহাদাত হোসেন, মোহাম্মদ ফরহাদ, হারুনুর রশিদ, সুব্রতসহ অনেকে। তাঁরা প্রত্যেকে বলছেন, তাঁরা ৭৫-এর ওপরে নম্বর পাবেন এবং তাতে পাস করবেন বলে আশা ছিল। কিন্তু তাঁরা উত্তীর্ণ হননি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এবার শুরু থেকেই কোটা হিসেবে প্রার্থী নেওয়ায় অনেক মেধাবী প্রতিযোগী বঞ্চিত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন ক্ষুব্ধ কিছু শিক্ষার্থী। তাঁরা সমতার ভিত্তিতে ফল না দিলে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। পত্রিকায় পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, তাঁদের যে বন্ধুরা মুক্তিযোদ্ধা ও আদিবাসী কোটায় আবেদন করেছেন তাঁরা ৬০ থেকে ৬৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। আর মেধা কোটায় ৭৫ থেকে ৭৮ নম্বর পেয়েও উত্তির্ণ হওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত পিএসসি কখনো প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাওয়া নম্বর প্রকাশ করে না। এমনকি কাট নম্বরও তাঁরা প্রকাশ করে না। ফলে এ নিয়ে বিভ্রান্তি, অবিশ্বাস ও অস্বচ্ছতা থেকে যায়। জানতে চাইলে পিএসসির আরেকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই কোটার কারণে অনেক পদ শূন্য থেকে যায়। কারণ মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন কোটায় শেষ পর্যায়ে গিয়ে প্রার্থী পাওয়া যায় না। এ কারণে এবার শুরু থেকেই কোটা চালু করা হয়েছে।
এর ফলে মেধাবীরা বঞ্চিত হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেধাবীদের বঞ্চিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ উত্তীর্ণদের মধ্যে ৫৫ ভাগ মেধা কোটা থেকেই নেওয়া হয়েছে।
উত্তীর্ণ ১২ হাজার ৩৩ জনের মধ্যে কতজনকে কোটা থেকে নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ওই সদস্য বলেন, ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটায়, পাঁচ ভাগ উপজাতি কোটায় ও ১০ ভাগ নারী কোটায় নেওয়া হয়েছে। এই হিসাবে মোট উত্তীর্ণদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজারের মতো মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। হাজার খানেক নারী কোটায় এবং ৫০০ জন নারী কোটায় এসেছে।
হুট করে এবার প্রিলিমিনারি থেকেই কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো জানতে চাইলে ওই সদস্য বলেন, কোটায় প্রার্থী না পাওয়ায় বারবার পদ শূন্য থাকে। আবার পরীক্ষা নিতে হয়। এ কারণেই এটা করা হয়েছে। পাশের দেশ ভারতেও এই নিয়ম চালু আছে। পিএসসি সর্বসম্মতভাবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।