হাজারো বসতির মাঝে শব্দহীন খুন!

চা-বিক্রেতা মিজানুর রহমানকে গত ২৮ মে ভোররাতে জবাই করে হত্যা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
চা-বিক্রেতা মিজানুর রহমানকে গত ২৮ মে ভোররাতে জবাই করে হত্যা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতার স মিলের গলির দুই পাশেই ছোট ছোট বাড়িতে হাজারো মানুষের বসবাস। এ জনবসতির মাঝে গত ২৮ মে বৃহস্পতিবার ভোররাতে চা-বিক্রেতা মিজানুর রহমানকে (২৬) জবাই করে হত্যা করা হয়। অথচ রাস্তায় ফেলে এই নির্মম হত্যার সময় আশপাশের কোনো মানুষই টের পাননি!

মিজানের পরিবারের লোকজনও হত্যার কারণ বুঝতে পারছেন না। এ হত্যাকাণ্ডের পর তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না কারা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

ঘটনার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। গতকাল রোববারও দেখা গেছে, মিজানের বাড়ির সামনে রক্ত ছড়িয়ে আছে। দুপুরের রোদে সেই রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে যাচ্ছে, আর বৃষ্টির পানিতে সে রক্ত আবারও হয়ে যাচ্ছে লাল।

ঘটনাস্থল ও মিরপুর-১০ নম্বরের ফলপট্টিতে মিজানের চা দোকানের আশপাশের এলাকা ঘুরে জানা গেছে, রাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ট্রাকে করে ফল নিয়ে আসে। এ জন্য ওই এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত অস্থায়ী চায়ের দোকানগুলোয় বেচাকেনা ভালোই হয়। তাই অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও বেশ রাত পর্যন্ত দোকানেই ছিলেন মিজান।


স্থানীয় ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, ঘটনার আগে রাত দেড়টার পর্যন্ত মিজান তাঁর সঙ্গে ছিলেন। দোকানের মালামাল গুছিয়ে ওই সময়ই ১৮৯ নম্বর সেনপাড়ায় নিজেদের ভাড়া বাড়িতে ফিরতেন মিজান।

এ ঘটনায় ২৯ মে কাফরুল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে মামলা করেন মিজানের ছোট ভাই মামুনুর রহমান।

মামুন জানান, প্রতি রাতে মিজানের বাড়ি ফেরার সময় তাঁর মা রাজিয়া বেগম স মিলের গলির মুখে অপেক্ষায় থাকতেন। কিন্তু টানা গরমের পর ওই রাতে এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় একটু আগেই তিনি ঘুমিয়ে যান।

মামুন বলেন, ‘রাত দেড়টার পর্যন্ত ভাইয়া ঘরে ফেরেননি। আমিও আমার ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ি। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মানুষের চিত্কারে বের হয়ে বাড়ির গেটের সামনে ওর লাশ পড়ে থাকতে দেখি।’
স্থানীয় ৯৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী হলেও মিজান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন না। তাঁর নামে কোনো মামলা বা অভিযোগও ছিল না। তা ছাড়া মা-বাবা আর দুই ভাইয়ের সংসার চলত মিজানের আয়ের ওপর। মামুন বলেন, ‘বুঝতাছি না ভাইয়ারে ক্যান জবাই কইরা মারব।’

তবে মামুনের ধারণা, ঘটনার সময় রাতে একাধিক ব্যক্তি তাঁদের বাসার সামনে দীর্ঘ সময় কাটানোর পর মিজানকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে এমনও কেউ থাকতে পারে যারা হয়তো মিজানের পরিচিত।
মামুন ও আশপাশের লোকেরা জানান, মিজানের লাশের পাশে সিগারেটে অনেক টুকরো পড়েছিল। তাঁর বাঁ হাত ও বাঁ পায়ের গোড়ালিতে আঘাতের চিহ্নও ছিল। মিজানকে হত্যার পর বাড়ির ভেতরে ঢুকে উত্তর পাশের ভাঙা সিঁড়ি ও দেয়াল টপকে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তারা মিজানের মুঠোফোন সেটটিও নিয়ে যায়।

সিঁড়িটি দেখিয়ে প্রতিবেশী ষাটোর্ধ্ব আকলিমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিঁড়ির পাশেই আমার থাকার ঘর। রাত সাড়ে চারটার দিকে মনে হয় পাঁচ-ছয়জন মাইনষের সিঁড়িতে ওঠার শব্দ শুনছি।’

এদিকে পুলিশের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার কামাল হোসেন জানান, মিজানের পরিবারের বক্তব্য অনুসারে মামলা তদন্তকাজ চলছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একাধিক সোর্সের মাধ্যমে হত্যার কারণ এবং জড়িত ব্যক্তিদের ধরার চেষ্টা চলছে।’