কেমন আছেন নিমতলীর তিন মেয়ে

রুনার এই হাসি বলে দেয়, ভালো আছেন স্বামী–সন্তান নিয়ে৷ ছবি খালেদ সরকার
রুনার এই হাসি বলে দেয়, ভালো আছেন স্বামী–সন্তান নিয়ে৷ ছবি খালেদ সরকার

রাজধানীর নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আপনজনদের হারিয়েছিলেন রুনা, রত্না ও আসমা। মা-বাবাসহ স্বজন হারানো এই মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর উদ্যোগেই গণভবনে এঁদের বিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা এখন শেখ হাসিনার মেয়ে বলেই পরিচিত সবার কাছে।
২০১০ সালের ৩ জুন রাতের সেই ভয়াবহ ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি তাঁরা বয়ে বেড়াচ্ছেন চার বছর ধরে৷ ওই রাতে রুনার বিয়ের পানচিনি অনুষ্ঠান হচ্ছিল। রুনা ও রত্না বিউটি পারলারে গিয়েছিলেন। তাই আগুন তাঁদের স্পর্শ করতে পারেনি।
এরপর ৯ জুন বিয়ে হয়, নতুন ঠিকানা পুরান ঢাকার হোসনী দালান রোড। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তিন বছরের ছেলে আজানকে নিয়ে ব্যস্ত রুনা৷ স্বভাবসুলভ হাসিমাখা মুখে বললেন, ‘ও খুব দুষ্টু হয়েছে।’

এরই মধ্যে অফিস থেকে ফেরেন রুনার স্বামী জামিল। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করছেন। বলেন, ‘রুনা ও ছেলেকে নিয়ে খুব ভালো আছি। আমার শাশুড়ি (শেখ হাসিনা) এই চাকরিটা দিয়েছেন। তাই আর বিদেশ যাইনি।’

বাবার কাছে এসে চলো চলো করছিল আজান। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, নানির কাছে যাবে? বলে, হুম৷ পাশ থেকে রুনা বললেন, ‘ওর নাম তো প্রধানমন্ত্রীই রেখেছেন। আজানের জন্মের পর ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম আম্মুর কাছে। গত রোজার সময় আমাদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। দেখা করেছি। সবাইকে উপহার দিয়েছেন। আমাদের নতুন মা নিজের মায়ের কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছেন। অনেক ভালোবাসেন আমাদের।’
নিজের ছেলেকে দেখলে ছোট ভাইয়ের ছেলের কথা মনে পড়ে জামিলের। ‘আমার ছোট ভাই ও ওর তিন বছর বয়সী ছেলেটা সেদিন আগুনে পুড়ে মারা গেছে। আজানকে দেখলেই ওর জন্য মনটা হু হু করে ওঠে।’

রত্না–সুমনের সব স্বপ্ন এখন মেয়ে শ্রদ্ধাকে নিয়ে।ছবি খালেদ সরকার
রত্না–সুমনের সব স্বপ্ন এখন মেয়ে শ্রদ্ধাকে নিয়ে।ছবি খালেদ সরকার

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় ভরা সংসার: রুনার বড় বোন রত্নার বাড়ি নওয়াব বাগিচায়৷ এই বাড়ির নতুন সংযোজন শ্রদ্ধা, রত্নার দেড় বছর বয়সী মেয়ে। রত্না বলেন, ‘মেয়ে হওয়ার পর থেকে আর কিছু ভাবার সময় নেই। ওকে ঘিরে পুরোটা সময় কাটে। সকালে ওর বাবা অফিসে যায়। তার পর থেকে আমি আর মেয়ে। এই তো বেশ ভালো আছি।’
রত্নার স্বামী সুমন কাজ করেন বেসিক ব্যাংকের কেরানীগঞ্জ শাখায়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি ফিরলেন ক্লান্ত হয়ে। কিন্তু মেয়ের মুখের হাসি দেখে উধাও হয়ে গেল সব ক্লান্তি। সুমন বলেন, ‘এখন তো শ্রদ্ধাই সব। বউ-মেয়েকে নিয়ে সংসার গুছিয়ে নিয়েছি। সামনের মাসে নিজেদের বাড়িতে উঠব।’
রত্না বলেন, ‘যেকোনো সমস্যা হলেই আম্মুকে (শেখ হাসিনা) জানাই ওনার এপিএস সাইদুজ্জামান শেখরের মাধ্যমে। তিনি আমাদের খুব সহযোগিতা করেন। পয়লা বৈশাখে শুভেচ্ছা কার্ড পাঠিয়েছিলেন।’


দুই ছেলের সঙ্গে আসমা–আলমগীর দম্পতি। ছবি খালেদ সরকার
দুই ছেলের সঙ্গে আসমা–আলমগীর দম্পতি। ছবি খালেদ সরকার

আসমা-আলমগীর দম্পতির কথা: পরিবারের ৩৭ জন সদস্যকে হারিয়ে নিজের বেঁচে থাকা এখনো অবিশ্বাস্য লাগে আসমার কাছে। তবুও দুই সন্তান ও স্বামীর জন্য নিজেকে সামলে নেন তিনি। আসমা-আলমগীর দম্পতিরও চার বছর আগে ৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে গণভবনে বিয়ে হয়। বসার ঘরটির দেয়ালে আলোচিত সেই বিয়ের ছবি থরে থরে সাজানো।
আসমার স্বামী আলমগীর বর্তমানে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেসে কাজ করছেন। জানালেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি সুখী। তবে চাকরিটা স্থায়ী হলে আরেকটু নিশ্চিত হতেন।
আসমার দুই ছেলে আদর ও রামাদান। একজনের বয়স প্রায় তিন বছর, আরেকজনের ছয় মাস। রামাদান নাম রেখেছেন নানি শেখ হাসিনা। আসমা বলেন, আম্মু নিয়মিত খোঁজ নেন৷