হবিগঞ্জে রকেট লঞ্চারসহ বিপুল গোলা উদ্ধার

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতরে সাতটি বাংকারের সন্ধান পাওয়া গেছে৷ গতকাল র‍্যাব সদস্যরা এসব বাংকার থেকে দুই শতাধিক রকেট লঞ্চার ও অস্ত্র–গোলাবরুদ উদ্ধার করেন l ছবি: প্রথম আলো
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতরে সাতটি বাংকারের সন্ধান পাওয়া গেছে৷ গতকাল র‍্যাব সদস্যরা এসব বাংকার থেকে দুই শতাধিক রকেট লঞ্চার ও অস্ত্র–গোলাবরুদ উদ্ধার করেন l ছবি: প্রথম আলো

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী সংরক্ষিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের অভ্যন্তরে এক অভিযান চালিয়ে সাতটি পরিখা (বাংকার) থেকে বিপুল পরিমাণ রকেট লঞ্চার ও গোলা উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) একটি দল৷
গতকাল মঙ্গলবার র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের (অপারেশন) নেতৃত্বে র‌্যাব-৯-এর আড়াই শ সদস্য ওই অভিযান চালান৷ দিনভর চলা অভিযানে উদ্ধার করা গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে দুই শতাধিক রকেট লঞ্চার, ট্যাংকবিধ্বংসী বিস্ফোরক, মর্টার শেল, রকেট লঞ্চারের চার্জার, অয়েলসহ অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র৷
উদ্যানের টিপরা হাটির অদূরে গভীর অরণ্যে সন্ধান পাওয়া সাতটি পরিখার দুটি খুঁড়ে এসব অস্ত্রশস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়৷ ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানটির অবস্থান৷
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে র‌্যাব কয়েক দিন ধরেই ওই এলাকায় অনুসন্ধান চালাচ্ছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকালে ঢাকা থেকে তিনি ও কর্নেল জিয়াউল আহসান হেলিকপ্টারযোগে হবিগঞ্জ আসেন৷ পরে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর র‌্যাবের সদস্যরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন৷ প্রশিক্ষিত কুকুর ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সহায়তায় অভিযানে গতকাল পর্যন্ত তাঁরা সাতটি পরিখার সন্ধান পেয়েছেন৷ এগুলোর মধ্যে দুটি খুঁড়ে উল্লিখিত গোলাবারুদ উদ্ধার করেছেন তাঁরা৷
হাবিবুর রহমান আরও জানান, অভিযানে এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি৷ কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলা যাবে না৷
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন ও পুলিশ সুপার কামরুল আমীন গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷ পরে জেলা প্রশাসক জানান, অভিযানে র‌্যাবের সদস্যরা দুই শতাধিক রকেট লঞ্চার, ১৮০টি মর্টার শেল, ২৫০টি রকেট লঞ্চারের চার্জারসহ বিপুল পরিমাণ গোলা উদ্ধার করেছেন৷ একটি রকেট লঞ্চারের গায়ে ১৯৯০ সাল লেখা৷ তিনি বলেন, চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাকসুদুল কবীর একটি পরিখা থেকে একটি পুস্তিকা পেয়েছেন৷ এটির মলাটে লেখা, ‘কেন ত্রিপুরীরা তাদের স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে?’

বাংকার থেকে রকেট লঞ্চার ও গোলাবারুদের সঙ্গে ‘কেন ত্রিপুরীরা তাদের স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে?’ এই পুস্তিকাটি উদ্ধার করা হয় l ছবি: প্রথম আলো
বাংকার থেকে রকেট লঞ্চার ও গোলাবারুদের সঙ্গে ‘কেন ত্রিপুরীরা তাদের স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে?’ এই পুস্তিকাটি উদ্ধার করা হয় l ছবি: প্রথম আলো

র‌্যাব সূত্র জানায়, পরিখাগুলো অনেক পুরোনো৷ পাঁচটির মধ্যে দুটি পাকা ও একটি অাধা পাকা৷ অনেকটা সুড়ঙ্গপথের মতো পরিখার কাঠামো৷ ধারণা করা হচ্ছে, গোলাবারুদ মজুতকারীরা সংঘবদ্ধ৷
এ এলাকায় স্থানীয়দের যাতায়াত খুবই কম৷ উদ্যানের ভেতর দুটি টিলার একটিতে দুটি ও অপরটিতে পাঁচটি পরিখার সন্ধান পাওয়া যায়৷ সেখানে সন্ত্রাসীদের কোনো ঘাঁটি আছে কি না, তারও অনুসন্ধান চলছে৷ বেলা দুইটার দিকে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অভিযানস্থল ত্যাগ করেন৷ তবে র‌্যাব-৯-এর অধিনায়ক কমান্ডার মুফতি মাহমুদের নেতৃত্বে অভিযান অব্যাহত থাকবে৷ ঘটনাস্থলে র‌্যাবের এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়, অভিযানকালে র‌্যাবের নেটওয়ার্ক সিগন্যালে পরিখাগুলোতে অস্ত্র থাকার সংকেত ধরা পড়ে৷
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকটি পরিখা আরসিসি ঢালাই করা৷ অক্সিজেন মাস্ক পরে মই নামিয়ে র‌্যাবের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা নিচে নামছেন৷ পরে গোলাবারুদ তুলে এনে তা টিলার ওপর একটি নির্ধারিত স্থানে জমা করা হয়৷ সেগুলো কোন দেশের তৈরি সে বিষয়ে লেখা পড়া যায়নি৷ এগুলো অনেক পুরোনো৷ অনেকগুলোতে মরচে পড়েছে৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যে স্থানে গোলাবারুদ পাওয়া গেছে তা একসময় ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর আস্তানা হিসেবে পরিচিত ছিল৷
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি)