শিশুদের সুনির্দিষ্টভাবে গুরুত্ব দিতে হবে

প্রথম আলোর গোলটেবিলে বক্তারা। ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলোর গোলটেবিলে বক্তারা। ছবি: প্রথম আলো

পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সরকার নারী ও শিশুর উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এবারের বাজেট বক্তৃতাতেও অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। এতে শিশুদের সার্বিক উন্নয়নে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

আজ রোববার ‘এমডিজি (২০১৫) পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে শিশুদের অবস্থান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মন্ত্রী এ কথা বলেন। মন্ত্রী জানান, নারী ও শিশুর সুরক্ষায় সরকার অনেক আইন করেছে। পথশিশুদের জন্য সরকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে মন্ত্রী আরও বলেন, নারী, শিশুসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ হচ্ছে। সরকার বসে নেই। তবে জাতীয় অর্থনীতিতে ভালো অবস্থান এবং শিক্ষা না থাকলে অনেক সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব হবে না।
প্রথম আলো এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এতে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
আলোচনায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ) শামসুল আলম বলেন, ২০১৫-পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন ভাবনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে তাতে ১১টি লক্ষ্য, ৫৮টি লক্ষ্যমাত্রা এবং ২৪১টি সূচক রয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠকের বেশির ভাগ আলোচক ২০১৫-পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন ভাবনায় শিশুর বিষয়টিকে ‘ক্রস কাটিং ইস্যু’ বা বিভিন্ন লক্ষ্যের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না রেখে শিশুর সার্বিক সুরক্ষার বিষয়টি যাতে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেন।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের দলীয় পরিচালক স্টিফেন কে হালদার বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ ভাগই শিশু। অথচ বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে না তা হতে পারে না।
ইউএনডিপির সহকারী দেশীয় পরিচালক পলাশ কান্তি দাস ২০১৫-পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণে জাতিসংঘের বিভিন্ন পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন।
এর আগে ওয়ার্ল্ড ভিশনের অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার সাবিরা নূপুর গোলটেবিল বৈঠকের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। মূল বক্তব্য এবং আলোচকদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের পর ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন ভাবনায় কী কী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে জাতিসংঘ তা নিয়ে বিভিন্ন দেশকে মতামত দিতে বলেছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশও আছে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে বাংলাদেশ প্রস্তাব চূড়ান্ত করে তা বিবেচনার জন্য গত বছরের জুনে জাতিসংঘে পাঠিয়েছে। এভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে মতামত, জাতিসংঘের মহাসচিবের পাঠানো প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন ফোরামে আলোচনার ভিত্তিতে বর্তমানে ১৭টি লক্ষ্য নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিষয়গুলো উত্থাপন হবে। তখন বিভিন্ন দেশের এসব বিষয়ে ভোট দেওয়ারও সুযোগ থাকবে।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ মা, শিশুস্বাস্থ্যসহ অনেক সূচকে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সব জায়গায় বাংলাদেশের এসব অর্জনের কথা তুলে ধরেন। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও এগিয়ে আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শিশুদের আরও উন্নয়নে ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় শিশুর বিষয়টি আলাদা এবং সুনির্দিষ্টভাবে যাতে যুক্ত হয় সে উদ্দেশ্য নিয়েই এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের শিশু ফোরামের দুই শিশু সদস্য শম্পা ইসলাম ও নিজাম শাহীন যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরিতে শিশুদের মতামত নেওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, শিশুদের প্রতি সহিংসতার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন ভাবনায় শিশুর সার্বিক সুরক্ষা ও উন্নয়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
শিশুদের জন্য আলাদা একটি অধিদপ্তরের দাবি তোলা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি বলেও উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারপারসন এমরানুল হক চৌধুরী শিশুদের জন্য ‘ন্যায়পাল’ গঠনেরও সুপারিশ করেন।
গোলটেবিলে আরও বক্তব্যে দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের উপদেষ্টা (শিশু অধিকার) সৈয়দ মতলুবর রশীদ, জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জাহেরিন, ওয়ার্ল্ড ভিশনের অ্যাডভোকেসি পরিচালক চন্দন জেড গোমেজ প্রমুখ।