ঘুম নেই নাহারপুঞ্জিবাসীর

চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে প্রতি মুহূর্তের উদ্বেগ-আতঙ্ক। কখন পুঞ্জিতে আবার হামলা হয়, কখন পুলিশ আসে। এই ভয় নিয়েই পুঞ্জি পাহারা দিয়ে দিন গুজরান করছে মানুষগুলো৷ স্থবির হয়ে পড়েছে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনও। জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলার পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও হারানো সাহস ফিরে পাচ্ছে না তারা।
গত শনিবার বিকেলে একদল মানবাধিকারকর্মী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার নাহারপুঞ্জিতে (আসলমপুঞ্জি) গেলে এখানকার বাসিন্দা আদিবাসী খাসিয়ারা এভাবেই তাঁদের এখনকার দিনযাপনের চিত্র তুলে ধরেন৷
গত ৩০ মে নাহার চা-বাগানের একদল শ্রমিক ওই পুঞ্জিতে হামলা করেন। এ সময় দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে একজন চা-শ্রমিক নিতাই তাঁতী ঘটনার দুদিন পর (২ জুন) সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় নাহার চা-বাগানের ব্যবস্থাপক পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য ওই দিনই শ্রীমঙ্গল থানায় ১৫ থেকে ১৬ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। একই দিন নাহারপুঞ্জির আখতার ধার ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ আরও দেড় শ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
গত শনিবার দিন শেষে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা পুঞ্জিতে এসে পৌঁছেন৷ এ দলে ছিলেন ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, লক্ষ্মীকান্ত সিংহ, ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, ফাদার জোসেফ গোমেজ, শাহ শাহেদা আক্তার, তাহমিনা ইসলাম, সন্ধ্যা লক্ষ্মী দে প্রমুখ৷ প্রতিনিধিদলটি পুঞ্জি ছাড়াও এদিন চা-বাগানের ব্যবস্থাপক পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া চা-বাগানের অস্থায়ী শ্রমিক নিতাইয়ের স্ত্রী সঞ্চয়ীর সঙ্গে দেখা করেন।
মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে খাসিয়া নারী উইসকিলা লামিন (২৫) চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ‘আতঙ্কে ঘুম-খাওয়া নাই৷ বাচ্চাকাচ্চা নিয়া ভয়৷ আমরা শান্তি চাই৷’ পুঞ্জির সহকারী মন্ত্রী (সহকারী পুঞ্জিপ্রধান) ডিবারমিন পতাম বলেন, ‘ওদের (চা-বাগানের) দাবি জমি তাদের লিজ নেওয়া৷ কিন্তু আমরা ৩৪টি পরিবার প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে আছি। আমরা এ অবস্থার সুষ্ঠু সমাধান চাই।’
সুজনের ফারুক মাহমুদ বলেন, ‘আদিবাসীদের উচ্ছেদ চেষ্টা নিন্দনীয়। তাঁরা যাতে এ দেশে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারে সরকারকে সে উদ্যোগ নিতে হবে।’
চা-বাগানের ব্যবস্থাপক পীযূষ কান্তি বলেন, ‘একজন শ্রমিক মারা যাওয়ায় কিছুটা উত্তেজনা আছে। তবে খাসিয়াদের কিছু না বলতে শ্রমিকদের নির্দেশ দিয়েছি৷ আমরা চা-বাগানের আয়তন বাড়াতে তাঁদের উচ্ছেদে এখন আইনি পদক্ষেপ নেব৷’
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আর কোনো অপ্রীতিকার ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’