কিশোরগঞ্জে সংঘর্ষে শিশুসহ নিহত ৩

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন ও করিমগঞ্জ উপজেলায় সংঘর্ষে দুই কিশোর-কিশোরীসহ তিনজন নিহত ও ৮০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো মর্জিনা আক্তার (১৫), রবিন মিয়া (১১) ও জাকারিয়া মিয়া (২৮)। তাদের মধ্যে মর্জিনা ও রবিন মিঠামইন এবং জাকারিয়া করিমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। মর্জিনা স্থানীয় শহীদ আবদুল গণি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম ও রবিন চমকপুর দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল৷
আহত ব্যক্তিদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ ও মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজ উদ্দিন ও একই ইউনিয়নের শিহারা গ্রামের আবুল নাসের পক্ষের মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে বিরোধ রয়েছে৷ এলাকায় হাফিজের লোকজন এবার জমিতে সেচ প্রকল্প পরিচালনা করেছেন। ওই প্রকল্প থেকে নাসেরের পক্ষের বেশ কয়েকজন সেচসুবিধাও নিচ্ছেন৷ কিন্তু সেচের পানির মূল্য নিয়ে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তাঁদের মতপার্থক্য দেখা দেয়৷ এ নিয়ে ১৬ মে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হন।
সূত্র আরও জানায়, এর পর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল৷ গতকাল সকালে শিহারা গ্রামের একটি মুদি দোকানে দুই পক্ষের কয়েকজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এর রেশ ধরে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ এ সময় নিক্ষিপ্ত ইটপাটকেলের আঘাতে নাসেরের পক্ষের মর্জিনা ও রবিন মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যায়৷ এ ছাড়া আহত হন আরও ৪৫ জন৷ আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজনকে কিশোরগঞ্জ সদর, ইটনা ও করিমগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘সেচ ব্যবহার করে নাসেরের লোকজন টাকা পরিশোধ করতে চায়নি। সে টাকা চাওয়ায় তারা আমাদের ওপর হামলা করে৷ বাধ্য হয়ে আমরা প্রতিহত করতে নামি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে আবু নাসের বলেন, ‘িশলে এবার ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন খরচই ওঠেনি। তাই চাষিরা কিছু টাকা কম দিতে চেয়েছিল। এতে হাফিজের লোকজন খেপে ওঠে। তারা আধিপত্য ধরে রাখতে হামলা চালায়।’
সংঘর্ষের পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অষ্টগ্রাম সার্কেল) জামাল উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷ তিনি দুই শিশুর মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন৷
একই দিন দুপুরে করিমগঞ্জের নোয়াবাদ গ্রামের আবদুল মালেক মুন্সি ও মো. জাকারিয়ার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এলাকাবাসী জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে মালেক মুন্সির গাছ থেকে জাকারিয়া পক্ষের লোকজন একটি কাঁঠাল চুরি করে৷ এ নিয়ে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে দুই পক্ষ কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় প্রতিপক্ষের বল্লমের আঘাতে জাকারিয়া নিহত হন৷ এ সময় দুই পক্ষের আহত ৩৫ জনের মধ্যে দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং আরও দুজনকে কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া করিমগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে আরও ছয়জনকে৷
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আখতারুজ্জামান ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন৷