তাদের অন্য রকম দিন

শিল্পকলা একাডেমীতে আনন্দে মেতে ওঠে ছিন্নমূল শিশুরা । প্রথম আলো
শিল্পকলা একাডেমীতে আনন্দে মেতে ওঠে ছিন্নমূল শিশুরা । প্রথম আলো

সকাল থেকেই তেজ ঢেলে চলেছে সূর্য। কে মানে এই বাধা! পাত্তাই পাচ্ছে না গরম। শিশুদের কলতানে মুখর নগরের শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণ। চারদিকে শিশুদের দুরন্তপনা। কেউ ব্যস্ত আড্ডায়, কেউ বা দুষ্টুমিতে। আর কেউ মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে কী হতে চলেছে। ৬ জুন এখানে বসেছিল ছিন্নমূল শিশুদের মিলনমেলা।
‘উত্সবের রঙে বর্ণিল হোক স্বপ্নীল শৈশব’ স্লোগানে দিনব্যাপী এ মেলায় অংশ নেয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিদ্যালয় চারুলতা বিদ্যাপীঠ, ইরা বিদ্যানিকেতন ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা সহায়তা প্রদানকারী সংগঠন স্রোত। এসব বিদ্যালয়ের দেড় শ শিশু প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে থাকে সারা বেলা।
ঘড়ির কাঁটা ১০ টার ঘরে, সঙ্গে সঙ্গে আকাশে উড়ে নানা রঙের বেলুন। সূচনা হয় আনন্দ আয়োজনের। উদ্বোধন করেন দ্য ডেইলি স্টার চট্টগ্রামের ব্যুরো প্রধান এ কে এম রইসুল হক ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের কমান্ডার মো. সাহাবুদ্দিন। উদ্বোধন শেষে শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। শিশুরা নেচে-গেয়ে, বাঁশি বাজিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
এরপর শুরু হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন, সুন্দর হাতের লেখা, ছড়া পাঠ ও গানের প্রতিযোগিতা। একে একে এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিশুরা। কেউ বা আবার মেতে থাকে বিভিন্ন খেলায়। শিল্পকলা প্রাঙ্গণজুড়ে তৈরি বিভিন্ন স্টলে শিশুদের জন্য ছিল হরেক রকম খেলার আয়োজন। বেশি ভিড় ছিল জাদু প্রদর্শনীর স্টলে। এখানে জাদু প্রদর্শন করেন শান্ত আহমেদ। ছিল শিশুদের বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের সুযোগ। হঠাত্ কার্টুন চরিত্র মিকি মাউসকে দেখে বেড়ে যায় শিশুদের ছুটোছুটি। একবার মিকি মাউসকে ছুঁয়ে দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে সবাই। মেতে উঠে আনন্দ-উল্লাসে। ইরা বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার এই দলের একজন। সে বলে, ‘মিকি মাউসের লগে খেলি মজা পাইছি খুব।’
বিকেলে ফাহিম উদ্দিন ও রাজীব কুমার দের সঞ্চালনায় শুরু হয় অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিকপর্ব। নাচ, গান ও কথামালায় সাজানো ছিল এ পর্ব। প্রথমে ছিল চারুলতার স্বেচ্ছাসেবী সাবরিনা চৌধুরীর কণ্ঠে ‘অ তে অন্তর, আ তে আলো’ গানটির পরিবেশনা। এরপর কথামালা নিয়ে মঞ্চে আসেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক সবুজ মণ্ডল। তাঁর কথামালা শেষে নৃত্যের ঝংকারে মঞ্চ মাতিয়ে যায় ওডিশি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্টের সদস্যরা। প্রমা অবন্তীর পরিচালনায় তিনটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা শেষে কথামালা নিয়ে মঞ্চে আসেন চারুলতার উপদেষ্টা শাহনেওয়াজ রিটন। এভাবেই সাংস্কৃতিক আয়োজনের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে বক্তব্য। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অংশগ্রহণে গান ও নাচের পাশাপাশি ছিল আবৃত্তি পরিবেশনা। এ ছাড়া পাগলা দাশু নাটকটি পরিবেশনের মাধ্যমে মাধ্যমে হাসির রাজ্যে ঘুরিয়ে আনে চারুলতা বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা। এ নাটকের নির্দেশনায় ছিলেন সালাউদ্দিন রাশেদ।
বড় পর্দায় দেখানো হয় চারুলতার বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র। এরপর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এতে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক সুমন বড়ুয়া। পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় সারা দিনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের হাতে। বিশেষ সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয় চারুলতার স্বেচ্ছাসেবী তাসনিম ফায়জা ও সুরাইয়া জাহানকে।
আয়োজনে অংশ নেওয়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু মো. সুমন বলে, ‘আমাদের এ ধরনের মেলায় অংশ নেওয়া এবারই প্রথম। খুব ভালো লাগছে সবার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে।’ জয়া চৌধুরীর ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানের পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় আনন্দময় এ আয়োজন।