পাহাড়ের মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব পেল পার্বত্য জেলা পরিষদ

পার্বত্য চট্টগ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করেছে সরকার। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর তত্ত্বাবধান, উন্নয়নসহ যাবতীয় বিষয় এখন থেকে দেখভাল করবে পার্বত্য জেলা পরিষদ।
পার্বত্য চুক্তির ৩৩ (ক) ধারা অনুযায়ী, সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটি হস্তান্তর করল। এর মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তির একটি শর্তও বাস্তবায়িত হলো। গত ২৬ মে ঢাকায় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে এই বিভাগ হস্তান্তর হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চাই থো অং মারমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়াম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ হস্তান্তর চুক্তির মাধ্যমে জেলার ২৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীন হলো। চুক্তির বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একটি মহল উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও এই দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা পার্বত্য জেলা পরিষদের আছে কি না, তা নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শ্রীলা তালুকদার হস্তান্তরের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, এখন থেকে পার্বত্য জেলা পরিষদ পাহাড়ের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। এতে মাধ্যমিক শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে। বিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।
জেলার প্রবীণ শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা, বোধিসত্ত দেওয়ান ও সুধীন কুমার চাকমা মাধ্যমিক বিভাগ হস্তান্তরকে ইতিবাচক মনে করলেও পার্বত্য জেলা পরিষদের সক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী পরিষদ দিয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদ এতগুলো বিভাগ পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খাবে। তাঁরা পার্বত্য জেলা পরিষদে শিক্ষার জন্য আলাদা শাখা গঠনের পরামর্শ দেন। এদিকে জেলার জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নেতারা জানান, সরকারের সঙ্গে জনসংহতি সমিতির কয়েক দফা বৈঠকের পর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ও জনসংহতির এমএন লারমা অংশের সভাপতি সুধাসিন্ধু খীসা জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগটি যেভাবে হস্তান্তর হলো তার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এ হস্তান্তর এমনিতেই একটি চুক্তির আওতায় হয়েছে। সরকার একটি পরিপত্র জারি করেই হস্তান্তরের কাজটি সারতে পারত। কিন্তু হস্তান্তরের আগে সরকার পার্বত্য জেলা পরিষদের সঙ্গে আরও একটি চুক্তি করল। অথচ পার্বত্য জেলা পরিষদ জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। জেলা পরিষদের কর্তাব্যক্তিরা সরকারের মনোনীত ব্যক্তি। নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া পাহাড়ের শিক্ষা বিভাগ জেলা পরিষদের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনীন্দ্র লাল ত্রিপুরা জানান, পার্বত্যচুক্তি অনুযায়ী পরিষদের কাছে শিক্ষা বিভাগ হস্তান্তর ইতিবাচক। তবে এর সঙ্গে জেলা পরিষদের সদস্য ও লোকবল বৃদ্ধি করা জরুরি।
উল্লেখ্য, শিক্ষা বিভাগ হস্তান্তরের মাধ্যমে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের হাতে সরকার মোট ২৪টি বিভাগের হস্তান্তর করল।