ক্ষমতা দখলে সেনাবাহিনীকে উৎসাহিত করেছিলেন খালেদা

বাংলাদেশের সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য সেনাবাহিনীকে উৎসাহিত করেছিলেন৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী যুক্তরাজ্যের কয়েকজন সহানুভূতিশীল রাজনীতিকের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ দাবি করেন৷ গত শুক্রবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের একটি কমিটি কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়৷
মাহমুদ আলী বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে সংলাপ দাবি করলেও তাঁর উদ্দেশ্য সৎ ছিল না। নির্বাচনের জন্য তাঁর কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তিনি প্রার্থী বাছাইও করতে পারেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যেকোনোভাবে নির্বাচন বন্ধ করা এবং সে জন্য তিনি সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। আহ্বানের ভাষা যা-ই হোক না কেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল অসাংবিধানিক পন্থায় সরকার পরিবর্তন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংবিধান রক্ষা করার জন্যই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প ছিল না এবং সে কারণে তাঁর বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই শেখ হাসিনা তাঁকে টেলিফোন করে তাঁর সরকারি বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মন্ত্রী বলেন, ৩৭ মিনিটের ফোনালাপটি কার্যত কোনো সুখকর আলোচনা ছিল না৷ কেননা, তার মধ্যে ৩৫ মিনিটই খালেদা জিয়া একতরফা নানা অভিযোগ করে গেছেন। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে মিলে বিএনপি দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, কিন্তু পুলিশের ওপর হামলার খবর সেভাবে প্রচার পায়নি।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে মাহমুদ আলী বলেন, বিরোধী দল ভুলে গেছে, তারা শেখ হাসিনার প্রতি কী আচরণ করেছিল। তিনি শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনা উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, তাতে তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া সরকারের একাংশ জড়িত ছিল৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ অতীতে কখনোই এতটা ভালো অবস্থানে ছিল না৷ রাজনৈতিক সহিংসতা সত্ত্বেও এ বছর প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও ভালো করছে।
র্যাব প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তাহলে কি তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি? তিনি বলেন, র্যাবের যাদের বিরুদ্ধেই আইন ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটকাবস্থায় মৃত্যুর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে আটকাবস্থায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে তুলনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে এই হার অন্যদের তুলনায় কম।
লর্ড শেখ এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ: বিয়োন্ড দ্য হেডলাইন্স’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যারনেস মঞ্জিলাউদ্দিন, লর্ড বুলামিয়ার, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য চার্লস ট্যানক এবং জিন ল্যামবার্ট বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে, হাউস অব কমনসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের নির্বাচনবিষয়ক বিতর্কে অংশগ্রহণকারী রাজনীতিকদের কেউ কিংবা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার রাজনীতিক লর্ড অ্যাভবেরিকে এই সভায় দেখা যায়নি।
অবশ্য, আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাশেদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, ‘কার্যকর বিরোধী দলহীন নির্বাচন’ গণতন্ত্রের পরিপন্থী এবং দ্রুত বিরোধী দলকে নিয়ে নির্বাচন করা না হলে বাংলাদেশ আবারও ১৯৭৪-এর মতো একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশালের রূপ নেবে। তিনি বলেন, ‘আমি আজীবন আওয়ামী লীগ করি, কিন্তু বাকশালকে তখন যেমন সমর্থন করিনি, এখনো তেমন একদলীয় ব্যবস্থা প্রত্যাশা করি না।’
ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পক্ষেÿইকবাল আহমেদ এমবিই বাংলাদেশে গুমের আতঙ্ক তুলে ধরে বলেন, ব্যবসায়ী এবং তাঁদের পরিবার এ জন্য দেশে যেতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া, তিনি বাংলাদেশে দক্ষ ব্যবস্থাপক বা চিফ অপারেটিং অফিসারের সংকট বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করছে বলে উল্লেখ করে বলেন, এই কাজটির জন্য ব্যবসায়ীদের বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
চার্লস ট্যানক এমইপি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করে বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকার নিয়ে চীন ও জাপান যখন বিরোধে লিপ্ত, সে সময়ে ওই দুই দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর এবং বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস প্রাপ্তি সবাইকে বিস্মিত করেছে।