প্রতিশ্রুতি পূরণের উদ্যোগ নেই

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মোসাদ্দেক হোসেন নগরকে আরও দৃষ্টিনন্দন ও আইটি ভিলেজ স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এক বছর পূর্ণ হলেও সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷
নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখাতে পারেননি খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রও৷ কারণ হিসেবে তঁারা বরাদ্দে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন৷ তবে নতুন সিলেট উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে আছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী৷
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে পাঠানো খবর: গত বছরের ১৫ জুন এই চার সিটি করপোরেশন—রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ আওয়ামী লীগ-সমর্থিত তৎকালীন মেয়রদের পরাজিত করে চারটিতেই জয়ী হন বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা৷ রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন, খুলনায় মনিরুজ্জামান, সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী ও বরিশালে জয়ী হন আহসান হাবিব৷ অবশ্য আইনি জটিলতার কারণে তাঁদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে নির্বাচনের তিন মাসের বেশি সময় পর৷
নির্বাচনের আগে ২০ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন৷ এর মধ্যে ১৯টির বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷ একমাত্র কর না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি তিনি রেখেছেন৷ তবে মোসাদ্দেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকার প্রতিবছর এই নগরের জন্য ১২ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়৷ কিন্তু এবার তা কমিয়ে আট কোটি টাকা করা হয়েছে৷ এ ছাড়া ২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত হিসেবে বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না৷
মনিরুজ্জামান নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিলেন, মহানগরের সড়ক উন্নয়ন এবং বর্জ্য ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন, খালিশপুর শিল্পাঞ্চল পুনরুজ্জীবনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ কিন্তু এসব বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি৷ জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমার এক বছর ২৫ সেপ্টেম্বর পূর্ণ হবে৷ সেদিনই এ ব্যাপারে বলব৷ তবে বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ না পাওয়ায় খুলনা সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হবে৷’
দায়িত্ব নিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী নগরের কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করে সেসব সমাধানে স্বল্পমেয়ািদ, মধ্যমেয়ািদ ও দীর্ঘমেয়ািদ উদ্যোগ নেন। বিশেষ করে ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, যানজট নিরসনে রিকশা লেন চালু, জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া-খাল খনন এবং নগর ভবনকে দলীয় প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন৷ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এড়িয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার বিষয়টি নগরবাসী ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তবে সড়ক সংস্কার ও পানিসংকট নিরসনে সফল–তার বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চেয়ে আমাকে ভোট দিয়েছিলেন। আমি সেই পরিবর্তনের সূচনা দায়িত্ব নেওয়ার দিন থেকেই শুরু করেছি।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের আধুনিকায়নে প্রথম উদ্যোগ নেন সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন৷ জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল, বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব সেই ধারা অব্যাহত রাখবেন৷ কিন্তু নির্বাচনের পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁদের সেই অাশা পূরণ হয়নি৷ নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন, খাল খননসহ জনগণকে সব কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও মেয়র তা পূরণে উদ্যোগ নেননি৷
জানতে চাইলে আহসান হাবিব বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ২২টির মধ্যে কিছু কিছু পূরণ হয়েছে৷ বাকিগুলো পূরণে উদ্যোগ নেওয়া হবে৷ তিনি অিভযোগ করেন, বরাদ্দবৈষম্যের শিকার হচ্ছে বরিশাল সিটি করপোরেশন৷ যে কারণে নিজস্ব তহবিলের ভিত্তিতেই উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে৷