দুই শুল্ক কর্মকর্তাকে পেটাল বিজিবি

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলস্টেশনে গতকাল মঙ্গলবার দুই শুল্ক কর্মকর্তাকে বেধড়ক পিটিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা (বিজিবি)৷ মৈত্রী ট্রেন তল্লাশিতে লিখিত আবেদন চাওয়ায় ওই ঘটনা ঘটে৷
মারধরের প্রতিবাদে শুল্ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তিন ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন৷ এ সময় দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যায়৷
দর্শনা রেলস্টেশনের মাস্টার লিয়াকত আলীসহ শুল্ক কর্মকর্তারা বলেন, কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন গতকাল বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে স্টেশনে এসে পৌঁছায়৷ এ সময় যথারীতি চুয়াডাঙ্গা বিজিবির সদস্যদের উপস্থিতিতে ২১৭ জন যাত্রীর অভিবাসন ও শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ হয়৷ বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি ছাড়ার অনুমতিও দেওয়া হয়৷ সেই মুহূর্তে বিজিবির যশোর রিজিয়নের নায়েব সুবেদার শহিদ ট্রেন তল্লািশর অনুমতি চান৷ ওই সময় তাঁকে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক ট্রেনের নির্ধারিত সময় শেষ৷ এখন তল্লািশ করতে হলে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে৷ কিন্তু শহিদ কয়েকজন বিজিবি সদস্যকে নিয়ে জোর করে ট্রেনে উঠে এক নারী যাত্রীর ব্যাগ নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেন৷ শুল্ক ও অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারাও সেখানে ছুটে আসেন৷ কথা-কাটাকাটির পর ওই যাত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷
এরপর শহিদের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা দর্শনা কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম (৫৮) ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে (৫৫) লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান এবং গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যান৷
এই ঘটনার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে শুল্ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দর্শনা জয়নগর শুল্ক চেকপোস্টের শুল্ক কার্যালয়ে সঙ্গে সঙ্গেই তালা ঝুলিয়ে দেন৷ বেলা একটা থেকে গোটা চেকপোস্ট অচল হয়ে পড়ে৷ পরে চুয়াডাঙ্গায় বিজিবি ৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম মনিরুজ্জামানের অনুরোধে বিকেল চারটায় শুল্ক বিভাগের কর্মীরা কাজে যোগ দেন৷
আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বিজিবির নায়েব সুবেদার শহিদ ও অন্য সদস্যরা যে আচরণ করেছেন তা কোনো মানুষের করা উচিত নয়৷ প্রথমেই আমাদের পিকআপের পেছনে বসিয়ে যশোরের পথে রওনা হন৷ চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলীতে নিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন৷ স্বাক্ষর করতে অপারগতা জানালে দুর্ব্যবহার করেন৷ অনেক বাগ্বিতণ্ডার পর উথলী থেকে গাড়িটি ঘুরিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর দর্শনা স্টেশনে রেখে যান৷’
আনোয়ার বলেন, বিজিবির হামলায় তাঁর বাঁ হাতের জয়েন্ট ফেটে গেছে৷ চ্যাংদোলা করে পিকআপের ভেতরে ফেলায় সারা শরীরে ব্যথার সৃষ্টি হয়েছে৷
শহীদুল ইসলাম বলেন, তাঁকে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মাথায় ও পিঠে আঘাত লেগেছে৷ তিনি দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন৷ ঘটনাটি কাস্টমসের যশোর সদর দপ্তরে জানিয়েছেন৷ এ ব্যাপারে মামলা করবেন তিনি৷
বিজিবির যশোর রিজিয়নের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল গাজী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ট্রেনে তল্লাশি চালাতে গেলে শুল্ক বিভাগের লোকজন বাধা দেন—আইনগতভাবে কখনোই তঁারা পারেন না৷ দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে গেলেও তাঁদের সসম্মানে আবারও স্টেশনে রেখে আসা হয়েছে৷’ দুই কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন৷
এদিকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দর্শনা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজিবি ও শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়৷ বৈঠক শেষে বিজিবি কর্মকর্তা এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, উভয় পক্ষের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে৷ ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে জন্য উভয় পক্ষ সতর্ক থাকবে৷