মা শ্রমিকের আছে অধিকার

ম আইন ২০০৬ অনুযায়ী একজন মা শ্রমিককে দিতে হবে তাঁর প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা। মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ যাবতীয় বেতন-ভাতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে মা শ্রমিকের। শুধু তা-ই নয়, সন্তান আছে এমন নারী শ্রমিকের শিশুদের জন্য আলাদা শিশুকক্ষ থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে আইনে। এমনকি কাজের ফাঁকে শিশুদের পরিচর্যা করার সুযোগও আইনে নিশ্চিত করা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন কী সুবিধা পাবেনসন্তান জন্মের পরবর্তী আট সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো মা শ্রমিককে দিয়ে কারখানায় কাজ করানো যাবে না। কোনো নারী শ্রমিক যদি মালিককে জানিয়ে থাকেন যে ১০ সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা আছে অথবা ১০ সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসব করেছেন, তাহলে নারী শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করতে পারবেন না। চিকিত্সকের প্রত্যয়নপত্র প্রদান করে নারী শ্রমিক সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের পূর্ববর্তী আট সপ্তাহ আগে ও সন্তান প্রসবের পরবর্তী আট সপ্তাহের জন্য প্রসূতিকল্যাণ সুবিধা পাবেন। মালিক এই সুবিধা প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন। তবে শর্ত থাকে যে কোনো নারী যদি মালিকের অধীনে ছয় মাস কাজ না করে থাকেন, তাহলে এ সুবিধা পাবেন না। 

কীভাবে সুবিধা দাবি করবেন

আট সপ্তাহের মধ্যে সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা আছে—এ মর্মে মালিককে লিখিত বা মৌখিকভাবে নোটিশ দিতে হবে। এ নোটিশ প্রদানের পরদিন থেকে সন্তান প্রসবের পর আট সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটি পাবেন। শুরুতে নারী শ্রমিক এ নোটিশ না দিয়ে থাকলে সন্তান প্রসবের সাত দিনের মধ্যে নোটিশ প্রদান করে বিষয়টি মালিককে জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের তারিখ থেকে পরবর্তী আট সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটি পাবেন। যদি নারী শ্রমিক সন্তান হওয়ার পর সন্তান জন্মদানের প্রমাণ পেশ করেন, তাহলে মালিক সন্তান প্রসবের পূর্ববর্তী আট সপ্তাহের জন্য প্রদেয় প্রসূতি সুবিধাসহ পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট মেয়াদের সুবিধাও প্রদান করবেন। তবে কোনো প্রমাণ কোনো মা শ্রমিক  সন্তান প্রসবের তিন মাসের মধ্যে না জানালে তিনি এই সুবিধা পাবেন না। প্রসূতিকল্যাণ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত কোনো মা শ্রমিক প্রসবকালে অথবা পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে মারা গেলে যে ব্যক্তি শিশুর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাঁকে একই সুবিধা প্রদান করতে হবে। যদি শিশুটি জীবিত না থাকে, তাহলে নারী শ্রমিকটির মনোনীত ব্যক্তিকে অথবা তাঁর আইনগত প্রতিনিধিকে সুবিধা প্রদান করতে হবে। মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য আবেদন করার সময় মা শ্রমিক তাঁর মনোনীত ব্যক্তি (নমিনি) নির্ধারণ করে যাবেন।

যদি কোনো মা শ্রমিক সন্তান প্রসবের পূর্ববর্তী ছয় মাস এবং সন্তান প্রসবের পরবর্তী আট সপ্তাহ মেয়াদের মধ্যে চাকরি অবসানের জন্য মালিক কোনো নোটিশ প্রদান করেন এবং এ নোটিশের বা আদেশের যদি যথেষ্ট কারণ না থাকে, কোনো মা শ্রমিককে সুবিধা থেকে  বঞ্চিত করা যাবে না।

কারখানায় থাকতে হবে শিশুকক্ষ

যদি কোনো কারখানায় ৪০ বা তার বেশি নারী শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন, তাহলে ছয় বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্য এক বা একাধিক শিশুকক্ষের ব্যবস্থা থাকতে হবে। শিশু কক্ষগুলোর যথেষ্ট আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। কক্ষটি শিশুদের পরিচর্যার জন্য অভিজ্ঞ বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলার তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। সেখানে মায়েরা যেন সহজে যেতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। কারখানার এমন অংশে কক্ষ স্থাপন করতে হবে, যেখান থেকে বিরক্তিকর ধোঁয়া, ধুলাবালু বা গন্ধ নির্গত হবে না। কক্ষের দেয়ালে ও ছাদে উপযুক্ত তাপ এবং পানি প্রতিরোধক বস্তু থাকতে হবে। প্রত্যেক শিশুর জন্য বিছানাসহ একটি খাট বা দোলনা থাকবে। প্রত্যেক মা যখন শিশুকে দুধ পান করাবেন বা পরিচর্যা করবেন, তখন তাঁর ব্যবহারের জন্য অন্তত একটি চেয়ার বা  আসন থাকতে হবে। এ ছাড়া শিশুদের জন্য যথেষ্ট ও উপযুক্ত খেলনার ব্যবস্থা করতে হবে।