নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে সীমান্তে পশুর হাট

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী শহরগ্রাম ইউনিয়নের নাড়াবাড়ী হাটে সরকারি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে পশু কেনাবেচা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকর গ্রামের তোফাজ্জল ইসলাম নাড়াবাড়ী হাটটি ইজারা নিয়েছেন৷
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম এবং এলাকাবাসীর কয়েকজন জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে ওই পশুর হাট চলছে। হাফিজুল ইসলাম বলেন, সীমান্ত এলাকার এই হাটে পশুর হাট বসানোর জন্য ইজারাদার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। ওই আবেদনপত্রে স্থানীয় সাংসদ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান আ ফ ম বজলুর রশিদ, ভাইস চেয়ারম্যান আফজালুল আনাম ও ফিরোজা বেগম এবং উপজেলার ১১টি ইউপির চেয়ারম্যান সুপারিশ করেছেন৷
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বিরল উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের ২৩টি হাটের ইজারার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী কালিয়াগঞ্জ ও নাড়াবাড়ী হাটে পশু (গরু-মহিষ) বেচাকেনা করা যাবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে জানা যায়, হাট ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২৩ দিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউএনওর কার্যালয়ে প্রকাশ্যে হাটগুলোর ডাক হয়। এতে বিরল উপজেলার শহরগ্রাম ইউনিয়নের নাড়াবাড়ী হাটের সরকারি ইজারামূল্য ছিল চার লাখ টাকা। সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন হাটটি ১২ লাখ ১১ হাজার টাকায় ডেকে নেন।
৬ জুন বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, নাড়াবাড়ী হাটে অবাধে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া বেচাকেনা চলছে। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন জানান, ইজারা নেওয়ার পর থেকে ইজারাদার এই হাটে পশু কেনাবেচা শুরু করেন। প্রতি শুক্রবার পশুর হাট বসে৷ প্রতি হাটবারে পশু বেচাকেনা বাবদ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়৷
গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ইজারাদার তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘আমি পশুর হাট বসানোর ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যানের সুপারিশ নিয়ে ইউএনও এবং ডিসির কার্যালয়ে আবেদন করেছি৷ আশা করি, শিগগির অনুমোদন পেয়ে যাব৷’ অনুমোদন পাওয়ার আগে গরু-ছাগল বিক্রি করছেন কেন? এ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর তিনি দিতে পারেননি৷
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ বাজারে চার-পাঁচ বছর ধরে গরু-ছাগল বিক্রি হয়৷ এর আগে ভারতীয় চোরাই গরু কেনাবেচার কারণে বাজারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷ প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়ার আগে পশুর হাট বসানো ঠিক হয়েছে কি না—এর জবাবে তিনি বলেন, ‘অনুমোদন নেওয়ার হলে ভালো হতো৷ তবে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে৷ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে৷ এখন পরীক্ষামূলক হিসেবে পশুর হাট চালানো হচ্ছে৷ যদি আবার ভারতীয় চোরাই গরু বিক্রির অভিযোগ ওঠে তাহলে অবশ্যই বাজার বন্ধ করে দেওয়া হবে৷’
ইউএনও আবদুল্লাহ্ আল খায়রুম বলেন, ‘ইজারা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নাড়াবাড়ী হাটে পশু বেচাকেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর পরও পশুর হাট বসার খবর পেয়ে আমি তা বন্ধ করতে ২৪ এপ্রিল স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং থানার ওসিকে চিঠি দিয়েছি৷’ তবে এর পরও পশুর হাট কী কারণে বন্ধ হচ্ছে না—এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।