হুমকির মুখে সেতু, বাঁধ ও বসতবাড়ি

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলায় সদ্যনির্মিত ঘাঘট সেতুর কাছে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতু, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও অন্তত ১২টি পরিবারের বসতভিটা হুমকির মুখে পড়েছে৷
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর উত্তর পাশে বাঁশের সাঁকোতে লোক পারাপার হচ্ছে। দক্ষিণ পাশে সেতুর স্তম্ভ (পিলার) থেকে প্রায় ২০০ ফুট দূরে বসানো হয়েছে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র। এটির ১৫০ ফুট দূরে আরেকটি। এভাবে সারিবদ্ধভাবে নয়টি যন্ত্র বসিয়ে ২৩ দিন ধরে বালু তোলা হচ্ছে। বালু তোলায় প্রতিটি শ্যালো ইঞ্জিনের জায়গায় বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে৷ ঘাঘট নদীর দুই পাশেই রয়েছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বসতবাড়ি৷
খেয়াঘাট এলাকার কৃষক সুবল চন্দ্র সাহা, তারাপদ সাহা ও সুধাংশু চন্দ্র বলেন, বাড়িঘরসহ নদীসংলগ্ন তাঁদের প্রায় ছয় বিঘা আবাদি জমি ভাঙনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার যাওয়া যাচ্ছে না।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আউয়াল মিয়া বলেন, ‘নদী থেকে যেভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় বাঁধটি ভেঙে যেতে পারে৷ এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, শুধু ঘাঘট নদী কেন, জেলার কোনো সরকারি জায়গা কিংবা খাসজমি থেকে বালু উত্তোলনে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।
গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম খান বলেন, ‘প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়নি ঠিক। কিন্তু মাটি পাওয়া যায়নি। তাই বালু উত্তোলন করে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। তবে সেতু ও আশপাশের কোনো বসতবাড়ি বা বাঁধের ক্ষতি হবে না।’
সওজ কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে সাদুল্যাপুর-লক্ষ্মীপুর-সুন্দরগঞ্জ সড়কের সাদুল্যাপুর উপজেলা শহরের খেয়াঘাট এলাকায় ঘাঘট নদীর ওপর সেতু নির্মাণ শুরু হয়। এর দৈর্ঘ্য ৩২৫ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট। ১৩ বছরে প্রায় এক কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মাত্র চারটি স্তম্ভ নির্মিত হয়। ২০১৩ সালের জুন মাসে সেতুর ছাদ ঢালাই ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ছয় কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম দিকে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়। এই কাজের দায়িত্ব পান নাটোরের ঠিকাদার বখতিয়ার হোসেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় যুবলীগ নেতা ফারুক মিয়াকে সংযোগ সড়ক নির্মাণে মাটি ভরাটের দায়িত্ব দেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের সাংসদ ইউনুস আলী সরকারের সুপারিশে ফারুককে ওই কাজ েদওয়া হয়৷ দায়িত্ব পেয়ে ওই নেতা ভূগর্ভ থেকে বালু তুলে সড়কে ফেলছেন।
এ ব্যাপারে ফারুক মিয়া বলেন, বালু তোলায় পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু সেতুটি চালু হলে লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। বিশেষ করে, সাদুল্যাপুরের সঙ্গে গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ সহজ হবে। তাই বৃহত্তর স্বার্থে দ্রুত সেতুটি চালু করার জন্যই নদীর তলদেশ থেকে বালু তোলা হচ্ছে।
অবশ্য সাংসদ ইউনুস আলী সুপারিশের কথা অস্বীকার করেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার বখতিয়ার হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মুনছুর রহমান বলেন, সড়ক নির্মাণকাজ করার কথা ঠিকাদারের, কিন্তু করছেন অন্যজন। সাংসদের সুপারিশে এটা করতে হয়েছে। তবে কাজ ভালোভাবে বুঝে নেওয়া হবে।