মুরগি ও মৎস্য খামারে ব্যবহার বেশি

গত কয়েক বছরে দেশে মুরগি ও মৎস্য খামার —এ দুই খাতে সবচেয়ে বেশি ফরমালিন ব্যবহার করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই ফরমালিন ব্যবহারের বিষয়টি কমবেশি অনিয়ন্ত্রিত৷ ফরমালিনের আমদানি ও ব্যবহার অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত তিন বছরে ফরমালিন ব্যবহারের এ চিত্র পেয়েছে৷
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশের ২২টি প্রতিষ্ঠান এত দিন ফরমালিন আমদানি করেছে। তাদের কাছ থেকে সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩৫। আবার এরা কাদের কাছে ফরমালিন বিক্রি করছে, তা জানতে চেয়ে অধিদপ্তর গত বছর চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে ৫২টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জবাব পাওয়া যায়নি।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিঞা সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন যে ব্যাপক হারে ফরমালিনের অপব্যবহার হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আমদানিকারক খঁুজে বের করেছি। এখন তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা মধ্যম ব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। প্রান্তিক ব্যবহারকারীদেরও খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে।’
মহাপরিচালক বলেন, গত তিন বছরের হিসাব অনুযায়ী মুরগির খামারগুলো প্রায় ৭০ ভাগ ফরমালিন ব্যবহার করেছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরী বলেন, ‘এই শিল্পে ফরমালিন ব্যবহার করা হয় সংগতভাবেই৷ মূলত মুরগির খামার জীবাণুমুক্ত করতে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। তবে এখন যেভাবে ফরমালিনের অপব্যবহার হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে এ খাতের ব্যবহারটাও পর্যবেক্ষণ করা দরকার।’
জাতীয় পোলট্রি উন্নয়ন নীতিমালা, ২০০৮-এ ‘খাদ্যে কোনো প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না’ কেবল এটুকু সতর্কবার্তা ছাড়া ফরমালিন বা অন্য কোনো রাসায়নিক ব্যবহারের বিষয়ে কোনো কথা নেই।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুরগি খামারের ক্ষেত্রে আমাদের পর্যবেক্ষণ আছে। তবে এখানে ফরমালিনের অপব্যবহার হচ্ছে কি না, সেটা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করাটা কঠিন৷’
অন্যদিকে মৎস্য খামারে যে হারে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়েছে, মৎস্যবিশেষজ্ঞদের মতে তা অস্বাভাবিক। বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, পোনা উৎপাদনে পানির পাইপ পরিষ্কার করা, জীবাণুমুক্ত করা, পোনার ট্যাংক পরিষ্কার কিংবা ব্যবহৃত জাল পরিষ্কারে কিছু ফরমালিন লাগে৷ তবে এ কাজ চুন দিয়েও করা যায়। তাঁরাও তাই ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন। তিনি দাবি করেন, এ খাতে খুবই সীমিত ফরমালিন ব্যবহৃত হয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গোলজার হোসেন বলেন, একটা বড় হ্যাচারি চালাতেও বছরে ১০ লিটারের বেশি ফরমালিন ব্যবহারের দরকার নেই৷ এর বেশি ব্যবহার করা হলে ধরে নিতে হবে অপব্যবহার হয়েছে৷
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তালিকায় বিভিন্ন মত্স্য হ্যাচারিতে ব্যাপক পরিমাণে ফরমালিন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। পাবনার দাশুড়িয়া ফিশ হ্যাচারি ২০১১-১২ সালে চার হাজার ৩০ কেজি ফরমালিন ব্যবহার করে। ২৯টি পুকুর ও ৩০টি সিমেন্টের ট্যাংক আছে এ হ্যাচারির। এর তত্ত্বাবধায়ক মো. আলম বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন অনেক বেশি, তাই ফরমালিনের ব্যবহার বেশি।’
কক্সবাজারের শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্যাব) যুগ্ম মহাসচিব নজিবুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারের ৫০টি হ্যাচারিতে বছরে ৫০ হাজার কেজি ফরমালিনের ব্যবহার হয়। এর কোনো অপপ্রয়োগ হয় না বলেই দাবি তাঁর।
অধ্যাপক সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরী মনে করেন, মৎস্য খাতে প্রয়োজনের বেশি ফরমালিন ব্যবহৃত হয়৷ না জেনে বেিশ ব্যবহৃত হচ্ছে বা খামারিদের হাতে থাকা ফরমালিন ভিন্ন কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়েছে৷
এ অজানা বা ‘ভিন্ন ব্যবহারটাই’ উদ্বেগের, বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যদি মাছে ফরমালিন দেওয়ার কাজে ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে, তবে জনস্বাস্থ্যের বিরাট ক্ষতি হয়েছে ইতিমধ্যে। মাছে ফরমালিন দিলে পেটি এবং মাথায় তার অবশিষ্টাংশ রয়ে যায়।