আড়াই বছর পর পাস হলো খাল খনন প্রকল্প

‘বর্ষাকালে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে চায় সরকার। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মন্জুর আলম শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে কোনো প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে আসেন না।’
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেছেন। সভায় চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প পাস হয়।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘চট্টগ্রামের মেয়র বিএনপির, সরকার হলো আওয়ামী লীগের। উনি (মেয়র) কাজ করতে পারছেন না—এই যদি উনি মনে করেন, তাহলে উনাকে মেয়র হতে কে বলেছেন? যখন নির্বাচন হয়, তখন তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূর করতে উনি (মেয়র) আমাদের (পরিকল্পনা কমিশন) সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। যোগাযোগ না করা সত্ত্বেও আমরা চট্টগ্রামে প্রকল্প দিচ্ছি।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মন্জুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আমরা নিয়মিত এই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। যদি পরিকল্পনামন্ত্রী আমাদের ডাকেন, তবে অবশ্যই আমরা যাব।’
একনেক সভাসূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা দূর করতে আরও প্রকল্প নেওয়ার তাগিদ দেন। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা দূর করার প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সভায় উত্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাক্তাই খাল পুনরুদ্ধার করা যায় কি না, সে বিষয়ে বিবেচনা করা উচিত।
এ সময় এলজিআরডির অতিরিক্ত সচিব কে এম মোজাম্মেল হক প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, চাক্তাই খাল পুনরুদ্ধারের জন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়া হবে। চাক্তাই খালসহ চট্টগ্রাম শহর ও এর আশপাশের ১৯টি খাল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ সময় তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রকল্পটি তাড়াতাড়ি একনেকে নিয়ে আসেন।’
গতকালের একনেক সভায় অনুমোদিত বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম শহরে বর্ষাকালে দ্রুত বৃষ্টির পানি অপসারণের জন্য শহরে বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরে ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬৫ ফুট প্রস্থ খাল খনন করা হবে। এ ছাড়া খালের উভয় পাশে ২০ ফুট প্রস্থের সড়ক নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ দেবে সরকার। বাকি ব্যয় সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে৷ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদ, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, শুলকবহর, বাড়ইপাড়া, বাকলিয়া এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে বলে আশা করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়৷
প্রকল্পটি সম্পর্কে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র জানান, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শহরের জলাবদ্ধতা অনেকাংশে দূর হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার দীর্ঘদিন ধরে নতুন খাল খননের প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়ায় এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
জানা গেছে, শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে খাল খননের জন্য ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনাটি (ডিপিপি) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এর প্রায় আড়াই বছর পর প্রকল্পটি পাস হলো।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম শহরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে চট্টগ্রাম শহর প্রায় অচল হয়ে পড়ে। দুর্বিষহ ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী।
এ ছাড়া গতকালের একনেক সভায় আরও দুটি প্রকল্প পাস হয়। যেমন, ৮৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং ১২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি মহাসড়কের রানীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প।
পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিক সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেকের চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ; কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী; প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন; পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ; অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রমুখ।