পাহাড় কেটে যুবলীগ নেতার বসতি স্থাপন!

চট্টগ্রাম নগরের চশমা হিল আবাসিক এলাকায় পাহাড় কেটে বস্তি তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে৷ গত মঙ্গলবার তোলা ছবি l জুয়েল শীল
চট্টগ্রাম নগরের চশমা হিল আবাসিক এলাকায় পাহাড় কেটে বস্তি তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে৷ গত মঙ্গলবার তোলা ছবি l জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরের চশমা হিলে অবাধে পাহাড় কাটা চলছে। এখানে পাহাড় কেটে ইতিমধ্যে ভবন ও বস্তিঘর নির্মাণ করা হয়েছে৷ যুবলীগের নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী ও তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধে এই পাহাড় কাটা ও আবাসন নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পাহাড় কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মামুন চৌধুরী।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-সমবায়বিষয়ক সম্পাদক মামুন চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাগনে৷ পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের সঙ্গে মামুনের পাশাপাশি তাঁর ভগ্নিপতি মিনহাজ উদ্দিন সুলতানুল আলমও জড়িত।
গত মঙ্গলবার দুপুরে পাহাড় কাটার স্থানটি পরিদর্শনে গেলে মিনহাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে কয়েকজন তেড়ে আসেন। এ সময় তাঁরা প্রথম আলোর আলোকচিত্রীর কাছ থেকে ক্যামেরা কেড়ে নেন। একপর্যায়ে প্রতিবেদক ও আলোকচিত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাঁদের প্রায় আধা ঘণ্টা আটকে রাখেন। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হলে তাঁরা ক্যামেরা ফেরত ও দুজনকে ছেড়ে দেন। এ সময় মিনহাজ উদ্দিন সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নাম ধরে হুমকি-ধমকি দেন। তিনি বলেন, ‘এটা মহিউদ্দিন চৌধুরীর এলাকা। কার পারমিশন নিয়ে তোমরা এখানে এসেছ?’ তবে মামুন চৌধুরী দাবি করেন, এ ব্যাপারে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হিলভিউ আবাসিক এলাকার পাশের পাহাড়টি দুই দিক থেকে কেটে এক পাশে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনটির নিচতলা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নির্মীয়মাণ ভবনের নিচতলায় মিনহাজ উদ্দিন থাকেন। পাহাড়টির কোল ঘেঁষে কয়েকটি কাঁচা বসতঘর বেঁধে তা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে এখানে পাহাড় ধসে মাটি পড়ে বলে বাসিন্দারা জানান।
দেখা গেছে, পাহাড়ের ওপরের একাংশ কেটে আরেকটি কাঁচা ঘর তোলা হয়েছে। সেখানে থাকেন হামিদ নামের এক তত্ত্বাবধায়ক। কেউ কোনো ছবি তোলেন কি না বা প্রতিপক্ষ কেউ আসছেন কি না, তা পাহারা দেওয়াই তাঁর কাজ।
জানা গেছে, পাহাড়ি এই জায়গা নিয়ে ফেরদৌস আহমদ নামের একজনের সঙ্গে মামুনদের বিরোধ চলছে। পাহাড়ে ফেরদৌস আহমদের একটি সাইনবোর্ডও দেখা গেছে। এখানে তাঁরও জমি রয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁর বিরুদ্ধেও পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে।
তবে ফেরদৌস আহমদ বলেন, ‘আমি সেখানে কোনো পাহাড় কাটিনি। আমার জায়গা দখল করে মামুনরা ওই পাহাড় কেটে বাড়ি বানাচ্ছেন।’
জানতে চাইলে পাহাড় কাটার বিষয়টি অস্বীকার করে মামুন চৌধুরী বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ করিনি। বৃষ্টিতে পাহাড়ের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। ওখানে আমরা বাগান করেছি। ওখানে আমাদের চার গন্ডা (আট শতক) জায়গা রয়েছে। এ ছাড়া অন্যদেরও জায়গা রয়েছে। অন্য কেউ কাটলে কাটতে পারে। আমরা কাটিনি।’
পাহাড় কাটার বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা এখনো অবগত নয়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জাফর আলম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অবগত নই। আমরা লোক পাঠিয়ে বিষয়টি দেখব।’