টানা বৃষ্টিতে বগুড়া শহরের রাস্তাঘাট পানির নিচে

১২ ঘণ্টার বৃষ্টিতে বগুড়া শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটু পানি ভেঙে চলাচল করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। গতকাল সকালে শহরের সেউজগাড়ী তালুকদারপাড়া এলাকা থেকে তোলা l ছবি: প্রথম আলো
১২ ঘণ্টার বৃষ্টিতে বগুড়া শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটু পানি ভেঙে চলাচল করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। গতকাল সকালে শহরের সেউজগাড়ী তালুকদারপাড়া এলাকা থেকে তোলা l ছবি: প্রথম আলো

১২ ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বগুড়া শহরের রাস্তাঘাট। পানিতে থইথই করছে বাসাবাড়ি, দোকান-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বাজারঘাট, খেলার মাঠ, স্কুল-কলেজ চত্বর, অফিস-আদালত, শিল্প এলাকা। গতকাল রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক ছিল পানির নিচে। জলাবদ্ধ শহরের রাস্তাঘাট ছিল প্রায় যানবাহনহীন। টানা বর্ষণ আর জলাবদ্ধতায় স্থবির হয়ে পড়েছিল জনজীবন।
বৃষ্টিপাতের সময় দেয়ালচাপা পড়ে একজন গৃহবধূ, বজ্রপাতে এক কলেজছাত্র ও জলাবদ্ধ সড়কে রিকশা নিয়ে বের হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে এক রিকশাচালক মারা গেছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বগুড়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা আফরোজা খাতুন জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে রোববার বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত টানা প্রায় ১২ ঘণ্টায় ১৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের ১১ আগস্ট ২১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে আকাশের গর্জনের সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের সময় শহরের রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। সকাল আটটার মধ্যে শহরের রাস্তাঘাট হাঁটুপানিতে ডুবে যায়। শহরজুড়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সকাল সাড়ে আটটায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার ময়লা-আবর্জনায় ভরা নালাগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না থাকায় ময়লা পানিনিষ্কাশন পুরোপুরি বন্ধ। পানিনিষ্কাশন বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে টানা বৃষ্টিপাতে শহরের সাতমাথা থেকে থানা মোড় পর্যন্ত কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, ঝাউতলা থেকে বড়গোলা সড়ক, চকযাদু সড়ক, মালগুদাম লেন, জ্বলেশ্বরীতলা আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ সড়ক, সাতমাথা-পার্করোড, সাতমাথা টেম্পল সড়ক, জিলা স্কুল সড়ক, সেউজগাড়ির সূত্রাপুর ঈদগা মাঠ থেকে জামতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত, সেউজগাড়ি কারমাইকেল সড়কসহ শহরের অধিকাংশ সড়ক তলিয়ে গেছে। এসব সড়ক দিয়ে বিকেল পর্যন্ত পানির স্রোত বয়ে যেতে দেখা গেছে। পানির নিচে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় দুপুর পর্যন্ত শহরে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ছিল। এতে বিভিন্ন উপজেলা সদর থেকে আসা শহরমুখী মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
শহরের সাতমাথা থেকে হাঁটুপানি মাড়িয়ে থানা মোড়ের দিকে আসছিলেন কলেজশিক্ষক নুরুল ইসলাম। তিনি ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, কাল থেকে কলেজ বন্ধ হবে। প্রতিষ্ঠানে না গেলেই নয়। অথচ সাতমাথা থেকে এ পর্যন্ত আসতেই জামাকাপড় ভিজে একাকার। বগুড়া এখন একটা ঘিঞ্জি শহর।
জ্বলেশ্বরীতলা আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে অথই পানিতে সাঁতার দিচ্ছিল কয়েকজন শিশু। চাকরিজীবী রাজীব সরকার বলেন, খেলার মাঠে পানি জমে এখন রীতিমতো নদী। শহরের পানিনিষ্কাশন-ব্যবস্থা কতটা নাজুক সেটা খেলার মাঠের এ চিত্র দেখলেই বোঝা যায়।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হায়দার মো. ফায়েজুর রহমান জানান, রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে শহরের দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়া এলাকায় প্রতিবেশীর আধা পাকা বাড়ির দেয়াল ধসে পড়ে স্বপ্না বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। স্বপ্না দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়ার মতিউর রহমানের স্ত্রী। সকালে শহরের সেউজগাড়ি কারমাইকেল সড়কে রিকশা নিয়ে বের হয়ে স্থানীয় কৃষিফার্মের সামনে রাস্তায় পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে অজ্ঞাতনামা এক রিকশাচালক প্রাণ হারিয়েছেন।
দুপচাঁচিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রাজ্জাক জানান, রোববার ভোররাতে উপজেলার হেরুঞ্জ গ্রামের কলেজছাত্র রাজু আহমেদ ওরফে রহিম (১৬) বৃষ্টিতে বাড়ির পাশে মাছ ধরতে বের হয়েছিল। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। আহত হন লুৎফর রহমান নামে আরও এক ব্যক্তি। তিনি বর্তমানে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
শহরজুড়ে জলাবদ্ধতার জন্য শহরবাসী নাজুক পানিনিষ্কাশন-ব্যবস্থা এবং পৌরসভার নালা নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার অভাবকে দায়ী করলেও বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভার নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। তবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় নালাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পানিনিষ্কাশনে সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, অতিবৃষ্টির কারণেই শহরজুড়ে এমন জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বিকেলের মধ্যে সব পানি যাতে নেমে যায়, এ জন্য পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছেন।