অবেদনবিদের অভাবে প্রসূতিসেবা ব্যাহত

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কালিপুরের বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তারের (২২) প্রসবব্যথা উঠলে গত রোববার তাঁকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করে দেখেন অস্ত্রোপচার জরুরি। কিন্তু হাসপাতালে অবেদনবিদ না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। পরে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অবেদনবিদের অভাবে উপজেলাগুলোতে এভাবে জরুরি প্রসূতিসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। অস্ত্রোপচারের জন্য জটিল রোগীদের শেষ মুহূর্তে ছুটতে হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরের হাসপাতালে। জরুরি ধাত্রী সেবাভুক্ত (ইওসি) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কেবল স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রম চলছে এখন। এগুলো হলো ফটিকছড়ি, মিরসরাই, লোহাগাড়া, পটিয়া এবং বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রসূতিসেবায় ছয়বার বিভাগীয় পর্যায়ের সেরা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। ওই কমপ্লেক্সটিতে চার মাস ধরে জটিল প্রসূতি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অবেদনবিদ না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ প্রসূতির অস্ত্রোপচার হতো। এখন জরুরি জটিল রোগীদের শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত মাসে এখানে ২৩০টি স্বাভাবিক প্রসব হয়।
ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা (টিএইচএফপি) দেবাশীষ দত্ত বলেন, ‘চার মাস ধরে এখানে অবেদনবিদ নেই। সপ্তাহ খানেক আগে প্রসূতি কনসালট্যান্টকেও বদলি করা হয়েছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক ডেলিভারি ছাড়া অন্য কোনো সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।’
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চার মাস ধরে অবেদনবিদ নেই। প্রসূতি কনসালট্যান্টও বর্তমানে ছুটিতে আছেন। এখানে মাসে গড়ে ৪০টি স্বাভাবিক প্রসব করানো হয়। অবেদনবিদ থাকলে জটিল প্রসূতিদেরও সেবা দেওয়া সম্ভব হতো বলে মনে করেন টিএইচএফপি রেজাউল করিম।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ২০ জুন বিলকিস আক্তার (২০) নামের এক প্রসূতিকে স্বজনেরা এখানে নিয়ে আসেন। ওই প্রসূতি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। পরে তাঁকে চট্টগ্রাম নগরে নিয়ে আসা হয়। শেষ মুহূর্তে এভাবে টানাহেঁচড়া করতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে বলে চিকিৎসকেরা জানান।
মিরসরাইয়ের টিএইচএফপি এস এম তবারক উল্লাহ বলেন, ‘আমার এখানে প্রতি মাসে গড়ে ২৫টি অস্ত্রোপচার হতো। কিন্তু চার মাস ধরে এখানে অবেদনবিদ নেই। তাই জটিল রোগীদের সেবাদান বন্ধ রয়েছে। আমরা কেবল স্বাভাবিক প্রসব কাজ করে যাচ্ছি।’
পটিয়ায় অবেদনবিদ নেই দুই মাস ধরে। একইভাবে লোহাগাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও অবেদনবিদ নেই কয়েক মাস ধরে। ফলে এখানকার বাসিন্দাদের জটিল প্রসূতিদের নিয়ে চট্টগ্রাম নগরে ছুটতে হয় বলে চিকিৎসকেরা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন সরফরাজ খান চৌধুরী বলেন, ‘অবেদনবিদের অভাবে ইওসি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জটিল রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্বাভাবিক প্রসবকাজ ঠিকভাবে চলছে। অবেদনবিদের জন্য আমি ওপরে লিখেছি।’