দেশের ১৭ শতাংশ মানুষ স্থূল

দেশে বয়স্কদের ১৭ শতাংশ স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজনের শিকার৷ শিশুদের মধ্যে এই হার সাড়ে ৪ শতাংশ৷ গত ৩৩ বছরে বয়স্কদের মধ্যে স্থূলতার হার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে৷ সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রভাবশালী চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট-এ ছাপা হয়েছে৷
‘১৯৮০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে শিশু ও বয়স্কদের অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা: ২০১৩ সালের বৈশ্বিক রোগের বোঝা নিয়ে প্রতিবেদনের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গবেষণায় ১৮৮টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে৷ তাতে বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে দেশে স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের শিকার ছিল ৭ শতাংশ বয়স্ক ও ৩ শতাংশ শিশু৷
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সহযোগী বিজ্ঞানী আলিয়া নাহিদ৷ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গবেষণায় প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে৷ বাস্তব পরিস্থিতি আরও খারাপ৷ শিশুদের মধ্যে অতি ওজন ও স্থূলতা বাড়ছে৷ তিনি বলেন, গ্রামের চেয়ে শহরে এ সমস্যা বেশি৷ দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে এ সমস্যা প্রকট হচ্ছে৷
গবেষকেরা বলছেন, অতি ওজন ও স্থূলতা সব বয়সী মানুষের জন্যই সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে৷ এ কারণে হৃদ্রোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ছে৷ ২০১০ সালে তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল অতি ওজন ও স্থূলতা৷ গবেষকেরা বলছেন, স্থূলতার সমস্যা এখনই কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে তা বিভিন্ন দেশে গড় আয়ু কমিয়ে দেবে৷
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এ বি এম আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, যারা বসে থাকে, শারীরিক কাজ কম করে, তাদের ওজন বাড়ে, তারা স্থূল হয়৷ এসব মানুষ হৃদ্রোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ বা বাতজাতীয় রোগে বেশি আক্রান্ত হয়৷ তিনি আরও বলেন, মাঠে না খেলে কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্তথাকা শিশুরা এর শিকার৷
ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার শিকার৷ ১৯৮০ থেকে ২০১৩ সাল—এই ৩৩ বছরে ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে অতি ওজন ও স্থূলতা ৫০ শতাংশ বেড়েছে৷ গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, মিসর, জার্মানি, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া—এই ১০টি দেশে স্থূল মানুষের ৫০ শতাংশের বসবাস৷
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানে স্থূল মানুষের হার বেশি (১৪ শতাংশ)৷ আর শিশুদের মধ্যে এ সমস্যা ভুটানে বেশি (৬ শতাংশ)৷
এ অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, জীবনযাপনের পদ্ধতি ও খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করা দরকার৷ তিনি আরও বলেন, তেলজাতীয় খাদ্যের পরিবর্তে শাকসবজি বেশি খাওয়ার ব্যাপারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷ আলিয়া নাহিদ বলেন, সব শিশুর খেলাধুলার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে৷