সালিসে লাঞ্ছিত, ক্ষোভে গৃহবধূর আত্মহত্যা

গ্রাম্য সালিসে ভুট্টাগাছ চুরির অভিযোগে লাঞ্ছিত ও জরিমানা করায় দুঃখ ও ক্ষোভে বিষপান করে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ওই গৃহবধূর স্বামী মামলা করেছেন। এ মামলায় পুলিশ গত শুক্রবার রাতেই দুই সালিসকারী আখের আলী ও আবদুল হালিমকে গ্রেপ্তার করেছে। নিহত গৃহবধূর নাম সালমা বেগম। তিনি সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ গ্রামের বাঁশি মিয়ার স্ত্রী।
পুলিশ, এলাকাবাসী এবং মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার গরুকে খাওয়ানোর জন্য বাড়ির পাশের খেত থেকে ভুট্টাগাছের পাতা কেটে নেন গৃহবধূ সালমা। ভুট্টাগাছ চুরির ঘটনায় খেতের মালিক নমাজ আলী গ্রামের মাতবরদের কাছে বিচার চান। এ নিয়ে গত শুক্রবার দুপুরে মাতবরেরা হরগজ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাত নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মহর আলীর বাড়িতে সালিস বৈঠক আয়োজন করেন। এতে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ওই সালিসে মাতবর আখের আলী, আবদুল হালিম, লাল মিয়া, নূরু মিয়াসহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
গৃহবধূর স্বামী বাঁশি মিয়া অভিযোগ করে বলেন, সালিসে ভুট্টাগাছ চুরির অভিযোগে তাঁর স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এর পর দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন সালিসকারীরা। সালিসে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় তাঁর স্ত্রী বাড়িতে রাখা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন। ওই সময় তিনি (বাঁশি মিয়া) বাড়িতে ছিলেন না। রাতে বাড়ি ফিরে তিনি স্ত্রীর লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর পাঠান।
সাটুরিয়া থানার সূত্রে জানা গেছে, খবর পেয়ে রাত আটটার দিকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই গৃহবধূর ময়নাতদন্তে অংশ নেওয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল মালেক খালেক খান বলেন, ওই গৃহবধূ বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউপি সদস্য মহর আলী দাবি করেন, সালিস বৈঠকে গৃহবধূ সালমাকে লাঞ্ছিত করা হয়নি। সাটুরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেন বলেন, সালিসে লাঞ্ছিত করায় ওই গৃহবধূ বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।