মঞ্চ নির্মাণের নামে সরকারি টাকা পুকুরে ঢাললেন আ.লীগ নেতা?

পুকুরে ভাসবে নান্দনিক মঞ্চ। সেই মঞ্চে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মঞ্চের চারদিকে দর্শকের বসার জন্য থাকবে গ্যালারি। গ্যালারির উল্টো পাশের চারদিকে নির্মিত হবে বিপণিকেন্দ্র। সেখানে লোকজন ইচ্ছেমতো কেনাকাটা সারবেন।
বগুড়ার ধুনট উপজেলা পরিষদসংলগ্ন সরকারি পুকুরে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এমন একটি ‘ভাসমান মঞ্চ ও গ্যালারি’ নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টি আই এম নুরুন্নবী তারিক। প্রকল্পের নাম দিয়েছিলেন ‘এরিনা মঞ্চ’। নুরুন্নবী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালে এ জন্য সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সাড়ে সাত লক্ষাধিক টাকা খরচও করে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি।
সরকারি অর্থ লোপাট করতেই এ ধরনের ‘উচ্চাভিলাষী’ প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ধুনট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর পরিষদের পাশে ধুনট জিরো পয়েন্ট-উপজেলা পরিষদ সড়কের পাশের একটি পুকুরে ‘ভাসমান মঞ্চ ও গ্যালারি’ নির্মাণের উদ্যোগ নেন আওয়ামী লীগের নেতা নুরুন্নবী। এ প্রকল্পে ২০০৯-১০ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা) থেকে ২০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই গমের সরকারি মূল্য ছিল চার লাখ টাকা। এ প্রকল্প কমিটির সভাপতি করা হয় ধুনট সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমানকে।
২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর এরিনা মঞ্চ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ফলক উন্মোচন করেন বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাংসদ হাবিবুর রহমান। স্থানীয় অনেকে জানান, প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি বলতে ওই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন পর্যন্তই। জানতে চাইলে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ওই সময় গমের বাজারমূল্য কম ছিল। গম বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া গিয়েছিল, তা দিয়ে পুকুর সংস্কার করা হয়েছে।’
ওই অর্থবছরেই বিধিবহির্ভূতভাবে উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে আরও সোয়া দুই লাখ টাকা এরিনা মঞ্চ প্রকল্পে ব্যয় দেখানো হয়। উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় এ কাজ তদারক করে। কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ জানান, পুকুর পাড়ে মাটি ভরাটের জন্য ওই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কাজ না বুঝে নিয়ে বিল দেওয়ার কথা নয়।
এক বছর পর ২০১০-১১ অর্থবছরের কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্প থেকে এরিনা মঞ্চ নির্মাণে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই প্রকল্প কমিটিতে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান। মতিউর রহমান বলেন, ‘কাবিটা প্রকল্প থেকে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তা দিয়ে সম্ভবত পুকুর পাড়ে মাটিকাটা হয়েছিল।’
ধুনট উপজেলার তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল্লাহেল কাফি বলেন, ‘বরাদ্দের টাকায় পুকুরপাড়ে মাটি কাটা হয়েছিল। এরিনা মঞ্চ নির্মাণের সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।’
ধুনট সবুজ খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মঞ্চ নির্মাণের নামে পুকুরে সরকারি অর্থ ঢেলে কেউ পকেট ভারী করেছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা দরকার’।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি এখানে যোগদানের আগেই “এরিনা মঞ্চ” নির্মাণে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেটা সরকারি অর্থের অপচয় ছিল কি না তা সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন।’
টি আই এম নুরুন্নবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ওই পুকুরে ‘ভাসমান এরিনা মঞ্চ ও গ্যালারি’ নির্মাণের উদ্যোগ নিই।’
অবাস্তব প্রকল্প গ্রহণের নামে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুকুরটি অপরিচ্ছন্ন-নোংরা ছিল। কাবিখা-কাবিটার অর্থে পুকুরটি সংস্কার করা হয়েছে, কোনো লুটপাট বা অপচয় হয়নি।