আইএলওর বিবৃতি সংশোধনের অনুরোধ করবে বাংলাদেশ

সংশোধিত শ্রম আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অবস্থান সরকারকে হতাশ করেছে। সরকার মনে করছে, শ্রম অধিকারের বিষয়ে জেনেভাভিত্তিক সংস্থাটির সুনির্দিষ্ট উদ্বেগ সংশোধিত আইনে দূর করা হয়েছে। তাই গত সোমবার দেওয়া বিবৃতিতে সংশোধনী আনতে আইএলওকে অনুরোধ জানানো হবে।
শ্রম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বিবৃতি নিয়ে আজ বুধবার জেনেভায় নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. আবদুল হান্নান সংস্থার মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলবেন। ওই আলোচনায় বিবৃতির যেসব অংশ নিয়ে বাংলাদেশের আপত্তি আছে, তা তুলে ধরা হবে।
জানতে চাইলে শ্রমসচিব মিকাইল শিপার গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রম অধিকারের বিষয়ে সংশোধিত শ্রম আইনে আইএলওর উদ্বেগ দূর করার পরও, জেনেভা থেকে দেওয়া সংস্থার বিবৃতি আমাদের হতাশ করেছে। তা ছাড়া ৮ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বাংলাদেশ-আইএলওর ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালু এবং বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম চালুর জন্য সমীক্ষা চালানোর বিষয়টিও নতুন। জেনেভায় নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিকে এসব বিষয়ে আইএলওর কাছে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে বলা হয়েছে।’
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল এ প্রতিবেদককে জানান, ঢাকায় নিযুক্ত আইএলওর এদেশীয় পরিচালককে জেনেভার বিবৃতি নিয়ে অসন্তোষের কথা জানানো হয়েছে।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, সংশোধিত আইনের মূল কপি রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর এখনো মন্ত্রণালয়ের হাতে এসে পৌঁছায়নি। এমন পরিস্থিতিতে সংশোধিত আইনের ওপর মূল কপি ছাড়া আইএলওর এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো সমীচীন হয়নি। যেসব বিষয়ে কথা হবে: কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, আজ জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আইএলওর মহাপরিচালকের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে বিবৃতির কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের আপত্তি তুলে ধরা হবে। আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সংস্থার ঢাকা ও জেনেভা দপ্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার এ বিবৃতি কেন দেওয়া হলো, সেটি জানতে চাওয়া হবে। ইতিপূর্বে আইএলও জানিয়েছিল, শ্রম আইন সংশোধিত হলেই বাংলাদেশে বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম চালু হবে। অথচ এখন এ কর্মসূচি শুরুর আগে কেন সমীক্ষা চালুর কথা বলা হচ্ছে, সেটি স্পষ্ট নয়। তা ছাড়া ৮ জুলাই ‘কমপ্যাক্ট’ নামের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতায় আইএলও এসব কথা বলেনি। এমনকি সহযোগিতার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আরও নতুন পদক্ষেপের কথাও বলা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার দেওয়া বিবৃতিতে আইএলও বলেছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধন করলেও তা আন্তর্জাতিক শ্রমমানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সংগতিপূর্ণ নয়।
সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের শ্রমমান নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। আর শ্রম ইতিহাসের অন্যতম বিয়োগান্ত ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ বাজার-সুবিধা (জিএসপি) অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর বাংলাদেশের কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নতি ও শ্রমিকস্বার্থ রক্ষায় ঢাকা ও ইউরোপে নেওয়া একাধিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইএলও। ফলে আইএলওর নতুন বিবৃতিকে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।